শেষটা রাঙানোর প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু হলো উল্টো। সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করলো টাইগাররা। নির্লজ্জ ব্যাটিং ব্যর্থতায় কপালে জুটলো আরো একটি হার। সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা পাঁচ হারের লজ্জায় ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করলো মাহমুদউল্লাহ ব্রিগেড। শূন্য হাতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল লাল সবুজ জার্সিধারীরা।
বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদউল্লাহরা অল আউট মাত্র ৭৩ রানে, ১৫ ওভার। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর, আগেরটি ছিল ৭০ রানের। জবাবে অস্ট্রেলিয়া জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ৮২ বল হাতে রেখে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে।
জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেনিং জুটি করেন ৫৮ রান। তাসকিনের বলে প্রথম উইকেট খোয়ায় অজিরা। ২০ বলে দুটি চার ও চারটি ছক্কায় ৪০ রান করে বিদায় নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। জয়ের কাছাকাছি গিয়ে আউট হন ডেভিড ওয়ার্নার। ১৪ বলে ১৮ রান করে তিনি হন শরিফুলের বলে বোল্ড। মিচেল মার্শ ৫ বলে ১৬ রানে থাকেন অপরাজিত।
এর আগে দুবাইয়ে টস হেরে ব্যাট হাতে শুরুটা সেই হতাশা দিয়েই। টানা তিন ওভারে তিন উইকেট। রান তখন ১০। এরপর থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকটে হারায় নিয়মিত। ব্যাটিং দুঃস্বপ্ন রয়েই যায়।
প্রথম ওভারেই বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। গোল্ডেন ডাক। স্টার্কের ফুল লেংথ বলে স্রেফ জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন লিটন। ব্যাটের কানায় লেগে বল লেগে স্টাম্প ছত্রখান। প্রথম ওভারে লিটনের বিদায়ের পর দ্বিতীয় ওভারে আউট সৌম্য সরকার। লিটনের মতো তিনিও ‘প্লেড অন।’ হেজলউডের বলে বোল্ড তিনি। ৮ বলে ৫ করে আউট সৌম্য।
টেকেননি মুশফিকও। তৃতীয় ওভারে তিনি আউট। এবার অজি স্পিন আক্রমণ। যদিও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলটি এমন দারুণ কিছু ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল টার্ন করে ভেতরে ঢোকে। মুশফিক শাফল করে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মিস করেন লাইন, বল লাগে প্যাডে। অস্ট্রেলিয়ানদের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেননি মুশফিক। নিলেও লাভ হতো না। নিজের ৯৯তম টি-টোয়েন্টিতে মুশফিক আউট ২ বলে ১ রান করেই।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ নাঈম ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিছুদূর যাওয়ার পর বিদায় নাঈম। ষষ্ঠ ওভারে জশ হেজলউডের বলে দারুণ এক স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারলেও এই ওভারেই আউট তিনি। সহজ ক্যাচ যায় স্কয়ার লেগ ফিল্ডারের হাতে। ১৬ বলে ১৭ করেন নাঈম।
প্রথম ৩ ওভারে ৩ উইকেটের পর পাওয়ার প্লের পরের ২ ওভার স্বস্তিতে পার করতে পারে বাংলাদেশ। প্যাট কামিন্সের এক ওভারে দুটি চার মারেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। মিচেল স্টার্কের বলে দুর্দান্ত পুল শটে চার মারার পর মাহমুদউল্লাহ আরেকটি বাউন্ডারি পান ব্যাটের কানায় লেগে। ৬ ওভারে রান ৪ উইকেটে ৩৩। পাওয়ার প্লে শেষেও স্বস্তি মেলেনি। অ্যাডাম জ্যাম্পা আক্রমণে এসে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন আফিফ হোসেনকে। বাঁহাতি আফিফকে প্রথম বলটিই জ্যাম্পা করেন গুগলি। ভাসিয়ে দেয়া ব্যাটসম্যানকে প্রলুব্ধ করে ড্রাইভ খেলতে। আফিফ পা দেন ফাঁদে। কিন্তু পিচ করে বল পেরিয়ে যায় বাইরে। ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ স্লিপে অ্যারন ফিঞ্চের হাতে। ৪ বলে ০ রানে আউট আফিফ।
এর পরের গল্পটা হতে পারত ভিন্ন। কিন্তু শেষের দিকে অজি স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণিতে নাকাল ছিল বাংলাদেশ। শেষের পাচটি উইকেটই নেন জাম্পা। অল্পের জন্য বাংলাদেশ নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা থেকে রেহাই পায়। মাত্র ১৫ ওভারে ৭৩ রানে অল আউট বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ৭০ রান।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৯ রান আসে শামীম হোসেনের ব্যাট থেকে। বল খরচ করেন ১৮টি। পরের সবার রান ছিল দুই অঙ্কের নিচে। ১৮ বলে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেন ১৬ রান। তিনজনের রান দশের উপরে। বাকি আটজন ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের রান।
বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার দারুণ করেন অ্যাডাম জাম্পা। ৪ ওভারে ১৯ রানে তিনি তুলে নেন পাঁচ উইকেট। মিচেল স্টার্ক ও জশ হেজলউড নেন দুটি করে উইকেট। ম্যাক্সওয়েল পান একটি উইকেট।