দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে নেতারা তাদের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছেন দলের হাইকমান্ডকে। এর মধ্যে অনেকেই সারা দেশের জেলা ও মহানগরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে করার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সারা দেশের প্রতিটি বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপি’র হাইকমান্ড। বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের জেলা, থানা ও পৌর ইউনিটের কাউন্সিল করার নির্দেশনা দেয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের ওই বিভাগের জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কাউন্সিলের বিষয়ে বৈঠক করার জন্য বলা হয়। যেসব থানা ও পৌর এলাকায় সমস্যা রয়েছে সেখানকার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানের কথাও বলা হয়েছে। এরপর থেকে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা, থানা ও পৌর ইউনিটগুলোতে কাউন্সিল নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
এদিকে বিএনপি’র নেতারা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে কাউন্সিলের ক্ষেত্রে প্রশাসনের বাধা দেয়ার অভিযোগের পাশাপাশি দলীয় কোন্দল বিষয়টিও সামনে আসছে। কমিটি গঠন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা যত আন্তরিক কিংবা কঠোরই হন না কেন, প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপ এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের সৃষ্ট কোন্দলে সময়মতো কমিটি গঠন সম্ভব নাও হতে পারে। দ্রুত কমিটি করতে গেলে যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ পড়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।
তারা বলছেন, একদিকে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কয়েক দফা স্থগিত রাখা হয়। অন্যদিকে সরকারের রোষানলেও দল পুনর্গঠনে গতি আসছে না। যদিও তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতিকেও দুষছেন।
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ দুই বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলে নতুন কমিটি গঠন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে ব্যর্থ হলে যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে আরও তিন মাস সময় নেয়া যায়। কিন্তু এই তিন মাসেও কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে পূর্ববর্তী কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের শর্তে তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেবে কেন্দ্র। যদি আহ্বায়ক কমিটিও ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র কমিটি গঠন করে দেয়ার নিয়ম রয়েছে দলের গঠনতন্ত্রে। যদিও কমিটি গঠনে এসব নিয়মের কোনোটিই মানা হচ্ছে না।
বিএনপি’র দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিএনপি’র ৮১টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে ৪২টি, আর আহ্বায়ক কমিটি ৩৭টি। আর দুটি ইউনিটের প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেয়া আছে। এসবের মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৬ সালের ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি এবং ২০০৯ সালের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও রয়েছে। এদিকে সারা দেশে বিএনপি’র ১০টি বিভাগীয় সাংগঠনিক এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও ফরিদপুর বিভাগে বিএনপি’র সাংগঠনিক ইউনিট ১৭টি। এই দুই বিভাগে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ এবং মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির মেয়াদ রয়েছে। এ ছাড়া বাকি কমিটির একটিরও মেয়াদ নেই। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগে ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি রয়েছে। সেখানে লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির মেয়াদ রয়েছে। এ ছাড়া সব জেলা কমিটিই মেয়াদহীন। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ২০টি ইউনিট রয়েছে। এ দুই বিভাগের কোনো কমিটিরই মেয়াদ নেই। বরিশালে আটটি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটির মধ্যে মেয়াদ নেই একটিরও। রংপুর ও সিলেট বিভাগে ১৫টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। দুই বিভাগের একটি কমিটিরও মেয়াদ নেই। ময়মনসিংহ বিভাগে ছয়টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে একটিরও মেয়াদ নেই।
জানতে চাইলে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। যার কারণে সারা দেশের কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে এখন খুব দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।
এই সাংগঠনিক কার্যক্রমে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা প্রদান করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বিএনপি’র যেকোনো কার্যক্রমেই বাধা দিচ্ছে। সেটা হলরুম বলেন আর মাঠেই বলেন। সবখানেই তারা আমাদের বাধা প্রদান করছে। এসব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই সারা দেশে নেতাকর্মীরা কাউন্সিলে শরিক হচ্ছে।