ভেতরে শুরু সম্মেলন, বাইরে আন্দোলন

Slider সারাবিশ্ব


স্কটল্যান্ডের প্রধান নদী রিভার ক্লাইড ঘেঁষে গ্লাসগো সায়েন্স সেন্টার। ডিম্বাকৃতির এই সেন্টারটি গুগল ম্যাপে বৃত্তের মতো দেখা যায়। এই সেন্টারে করোনা ভাইরাসের মহামারী এবং জটিল জলবায়ু সংকটের মধ্যে গতকাল রবিবার শুরু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ২৬তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন (কপ ২৬)। পৃথিবীর প্রায় ১২০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এখানে এক হয়েছেন। বিশ্বনেতাদের এক হওয়ার ক্ষণে সম্মেলনের বাইরে পরিবেশবাদীরাও আন্দোলন শুরু করেছেন, যা সম্মেলনের শেষ অবধি চলবে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, মোড়ল রাষ্ট্রগুলো বৈশ্বিক জলবায়ুর ভারসাম্যহীনতা নষ্টের জন্য এককভাবে দায়ী, সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহীদ বলেছেন, আমাদের অজুহাত ফুরিয়ে এসেছে। বিশ্ব অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যা এড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমরা যথেষ্ট কিছু করছি না। তাই এখন সঠিক কাজ করার সময় এসেছে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক করার জন্য আমাদের দশকের পর দশক ছিল…। কিন্তু আমরা দৃঢ়প্রত্যয় বা সংকল্পের সঙ্গে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছি।

সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মা

বলেছেন, প্রাক-শিল্পায়নের যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্যারিস সম্মেলনের মূল লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এবারই আমাদের শেষ আশা। কারণ, পৃথিবী আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে এর সমাধান করতে পারি। আমরা ব্যর্থ বা সফল যা-ই হই না কেন, এই কাজটি আজ (গতকাল) থেকে শুরু হবে।

এর আগে সম্মেলনের নির্বাহী সচিব প্যাট্রিসিয়া এস্পিনোসা বলেন, আমরা ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। মানবতা নানামুখী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য দ্রুত অর্জন করতে হবে। অন্যথায় মানবজাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারের মুখোমুখি হবে।

তিনি বলেন, সফলতা সম্ভব, কারণ কী করতে হবে আমরা জানি। প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সব কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে হবে।

গেলবার ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্মেলন হয়নি। এবার করোনার প্রকোপ অনেক কম। তবু কড়া সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগত অতিথিদের জন্য কোনো কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। তবে দেশগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধি ছাড়া বাকিদের অনুষ্ঠানে যেতে হলে করোনা পরীক্ষা করতে হবে।

সম্মেলনে যোগ দিতে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ এসেছেন গ্লাসগোতে। এদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিবিদ, পরিবেশবিদ, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক। সায়েন্স সেন্টারে আগামী পৃথিবী বাসযোগ্য করার জন্য ১২ নভেম্বর পর্যন্ত নানা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে, আসবে নতুন ঘোষণা।

জাতিসংঘ গঠিত আন্তঃসরকার জলবায়ু প্যানেলের আগস্টে প্রকাশিত ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নসংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলো খুবই বিপজ্জনক। অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না কমালে বা তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি রোধে বিশ্ববাসী এখনই ঐকমত্যে না আসতে পারলে, বর্তমান শতাব্দীর শেষে বাসযোগ্য ও জলবায়ুসহিষ্ণু পৃথিবীর চিন্তা অনেকটাই অকল্পনীয়। আর ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য ‘চমৎকার’ ও ‘শেষ’ সুযোগ হিসেবে অনেকেই যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে গতকাল থেকে শুরু হওয়া কপ-২৬ সম্মেলনকেই দেখছেন।

সম্মেলন শুরুর আগেই বেশিরভাগ দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানো বিষয়ক তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলবে। ফলে আগেভাগেই বোঝা যাবে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বিশ্ব থাকছে কিনা। দুই সপ্তাহের এই সম্মেলনে নতুন নতুন অনেক ঘোষণাও আসতে পারে। এসব ঘোষণার বেশিরভাগই হতে পারে ‘খুবই টেকনিক্যাল’; যেমন হতে পারে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আরও যেসব নিয়মকানুন থাকা দরকার, সেগুলো যোগ করা।

সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গতকাল গ্লাসগো এসে পৌঁছেছেন। আগামীকাল ২ নভেম্বর তিনি সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য এই সম্মেলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমে বছরে ৫১ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুম-লে যোগ হয়। ওই নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান নগণ্য, মাত্র শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। তবে ক্ষতিগ্রস্তের দিক থেকে বাংলাদেশ সামনের কাতারে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে, তিন কোটি মানুষ বাড়িঘর ছাড়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *