গাজীপুরে দলীয় প্রধানের রায়ের আগেই এ্যাকশন!

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর: গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে দলীয়ভাবে একটি তদন্ত চলছে। চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ার বিচার ১৯ নভেম্বর। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটনাকে ঘিরে পক্ষে বিপক্ষের সংবাদ প্রতি মূহর্তে গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোয়ার-ভাটা দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু মিথ্যা খবরে বিভিন্ন পক্ষীয় লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে উত্তেজনাপূর্ণ করছে। এই উত্তেজনার প্রভাব রাজনৈতিক অঙ্গন পেরিয়ে আইন অঙ্গনেও আছড়ে পরছে। মিথ্যা খবরের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ দৃশ্যমান নয় কিন্তু মিথ্যা খবরের প্রভাবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রভাবিত হচ্ছেন বলে বলাবলি হচ্ছে। বিষয়টি গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ উৎকন্ঠাকে দিনদিন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ফেইসবুক কন্টেন নিয়ে উত্তাপ দেখা দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শৃঙ্খলা বিরোধী কোন বক্তব্য দিয়েছেন কি না, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ৩ অক্টোবর গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করে তার দল। নির্ধারিত ১৮ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাখ্যা দেন জাহাঙ্গীর আলম। পরবর্তী সময় ১৯ নভেম্বর আওয়ামীলীগ এর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

আজ ৩১ অক্টোবর। রাজনৈতিক এই বিচারের রায়ের এখনো ১৯ দিন বাকি। কিন্তু আসন্ন রায়কে ঘিরে দুই পক্ষেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় প্রধানের বরাত দিয়ে একাধিক গণমাধ্যম একটি অনুমান নির্ভর সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদে জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী অসন্তুষ্ট মর্মে বলা হয়েছে। সরকার প্রধান কিংবা দলীয় প্রধানের বক্তব্য সংবাদ আকারে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যে সকল যথাযথ মাধ্যম অনুমোদিত, সে সকল মাধ্যম থেকে এই সংবাদের জন্ম হয়নি। কিন্তু অনুমান নির্ভর সংবাদটিকে ঘিরে গাজীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গন ও মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে

স্থানীয় সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সরকারি অনুষ্ঠানে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ডাকা হয়নি। এমনকি কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশেও মেয়রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কমিউনিটি পুলিশিং তৃণমুল পর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ভিত্তি।

পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ মন্ত্রে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যাবস্থা গড়ে উঠে। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪২ ধারা অনুসারে জনগণের কাছে অপরাধী গ্রেফতার ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সাহায্য চাইলে জনগণ কর্তৃক পুলিশকে সহায়তা করার আইনী বাধ্যবাদকতা রয়েছে। মূলত সি আর পি সির ৪২ ধারার উপর ভিত্তি করেই কমিউনিটি পুলিশিং ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ, আইন ও বিধিমালা ধারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। পুলিশের কাজ মূলত অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা । বস্তুত আইনের আওতায় প্রদত্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে তা জনগণের সেবা করা হয়। অর্থাৎ পুলিশের কাজে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জনসম্পৃক্ততা । এই জনসম্পৃক্ততা তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকারের একটি অংশ। ৭৭ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নেতৃত্ব দেয়। নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত এই সকল জনপ্রতিনিধি গাজীপুর মহানগরে সকল নাগরিকদের স্থানীয় নেতা যা সরকারি ব্যাবস্থানায় ও ভোটে নির্বাচিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার একটি সরকার, যা জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কোন কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা আইনি বাধ্যবাধকতা ।

অনুসন্ধান বলছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্র্রীয় কাঠামোতে বিচারিক কার্যক্রমকে সহযোগীতা করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহ প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীগণ । কিন্তু সংবিধান, আইন ও পুলিশের সংবিধিবদ্ধ বিধিমালা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে গাজীপুরে ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা তা তদন্তের দাবি রাখে।

লক্ষনীয় বিষয় যে, গাজীপুর মহানগর পুলিশ গতকাল ৩০ অক্টোবর টঙ্গীর পাইলট স্কুল গার্লস কলেজ মাঠে কমিউনিটি পুলিশ ২০২১ উপলক্ষ্যে এক সমাবেশ করে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার বরকত উল্লাহ খান বিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী সাংসদ শামসুন নাহার ভূইয়া, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক ছিলেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বিপিএম । সমাবেশের ব্যানারে কোন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নাম নেই। অনুষ্ঠানের মূল স্লোগান ছিল মুজিব বর্ষের পুলিশ নীতি, জনসেবা আর সম্পৃতি। সারাদেশে ৬০ হাজার কমিউনিটি কমিটির মাধ্যমে ১২ লাখ কমিউনিটি পুলিশ এই দায়িত্ব পালন করেন।

সচেতন মহল বলছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জোড়ালো অংশগ্রহণ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশের সমাবেশ জনসম্পৃক্তা নিশ্চিত করতে বিঘ্ন করতে পারে। সুতরাং কমিউনিটি পুলিশের মূল স্লোগান “পুলিশই জনতা, জনতায় পুলিশ” বাস্তবায়নে অসংগতি থেকে গেলো।

রাজনীতি সচেতন মানুষ বলছেন, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রশ্নে সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান ১৯ নভেম্বর সিদ্ধান্ত নিবেন। এর আগে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ ও দলীয় পদ থেকে বহিস্কার/সাময়িক বহিস্কার/ শো’কজ করা হয়নি। সুতরাং জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় সরকারের গাজীপুর মহানগরের সরকার প্রধান ও দলীয়ভাবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল আছেন। ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা হলে, তা যথানিয়মে কার্যকর হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকার ও দলীয় প্রধানের সিদ্ধন্তের পূর্বেই আগাম শাস্তিমূলক ব্যাবস্থার ইঙ্গিত দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের প্রতি অশ্রদ্ধার সামিল। একই সাথে রাজনীতিবিদদের পারস্পরিক বিরোধকে ভিত্তি করে মাঠ প্রশাসনে প্রভাব, অনাকাংখিত বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *