প্রণোদনার ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাংক

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হলে সুদহারের ওপর পাঁচ কোটি টাকা ভর্তুকি পাওয়ার কথা ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকগুলো গত অর্থবছরে এ খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল। কিন্তু ছয় মাসের ভর্তুকির অর্থ তারা হাতে পেয়েছে। বাকি ছয় মাসের অর্থ (জানুয়ারি-জুন) এখনো পায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাচাই-প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরই মিলবে ভর্তুকির অর্থ। ভর্তুকির অর্থ পেতে এ দীর্ঘসূত্রতা, ঋণ বিতরণে জটিলতার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণে ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে (জুলাই-১৫ অক্টোবর) এ খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যেখানে পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এমনি পরিস্থিতিতে অনাগ্রহের কারণ চিহ্নিত করতে তদারকিতে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১০০ টাকা ঋণ বিতরণ করলে ৯ টাকা মুনাফা পেয়ে থাকে। এর চার টাকা পরিশোধ করে গ্রাহক। ভর্তুকি হিসেবে বাকি পাঁচ টাকা সরকার পরিশোধ করছে ব্যাংকগুলোকে। এ দিকে গেলো বছরে বিতরণ করা ভর্তুকির ঋণ ব্যবহারে নানা অভিযোগ উঠে। ভর্তুকির ঋণ নিয়ে কেউ বেশি সুদের ঋণ পরিশোধ করছেন। কেউ জমি কিনেছেন। কেউবা অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। আবার কারো কারো বিরুদ্ধে বিদেশে পণ্য আমদানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে সত্যতাও মেলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে সরকারি ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের সদ্ব্যবহারের ওপর যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ দেয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত যাচাই প্রতিবেদন কেবল অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হলেই মিলবে প্রণোদনার ভর্তুকির অর্থ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের ওপর ভর্তুকির অর্থ ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মার্চের ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাপ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ঋণের ব্যবহারের ওপর যাচাই প্রতিবেদন কেবল জমা দেয়া সাপেক্ষে সুদহারের ওপর ভর্তুকির অর্থ ছাড় করা হবে। এমনি পরিস্থিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চ প্রান্তিকের ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের সুপারিশ আর কাজে আসেনি। এর ফলে ভর্তুকির অর্থ আটকে যায়। সূত্র জানিয়েছে, ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ওপর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভর্তুকির অর্থ বিতরণ করা হয়েছে এমন বড় বড় শাখাগুলোতে তদন্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এমন শাখাগুলোতে তদারকি করা হচ্ছে। এ তদারকির প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুাপারিশ অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা হয়েছে। মার্চ প্রান্তিকের অর্থ আটকে আছে যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন জমা না দেয়ার কারণে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা থেকে শুরু করে ঋণ আদায় পর্যন্ত অন্য যেকোনো ঋণের বিতরণ ব্যয় বেশি। এ কারণেই এমনিতেই অনাগ্রহ ছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু এখন নতুন করে যুক্ত প্রণোদনার অর্থ পেতে দীর্ঘসূত্রতা। এর বাইরে এ খাতে ঋণ বিতরণের জন্য ভালো গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না। সবমিলেই এ ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরে ঋণ বিতরণের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য অসুবিধার কারণে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যেখানে সাড়ে তিন মাসে বিতরণ করার কথা ছিল সাত হাজার কোটি টাকার ওপরে। ব্যাংকারররা জানিয়েছেন, এসব কারণেই মূলত প্রণোদনার ঋণ বিতরণে তরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *