ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ষড়যন্ত্র হয় কুমিল্লায়’

Slider জাতীয়


কুমিল্লায় স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। একইসঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে সম্প্রতিকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গত ২৭ অক্টোবর রাত ১০টা ২৮ মিনিটে জয় তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বক্তব্যসহ একটি ভিডিও পোস্ট করে কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার বিষয়ে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ শাস্তির দাবিতে এসব কথা বলেন।

জয় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পাবলিশ করা ভিডিওর সঙ্গে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিক্ষত বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি লিখিত পোস্টও শেয়ার করেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৩ অক্টোবর ২০২১, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটানোর ষড়যন্ত্র হয় কুমিল্লায়। সেদিন সারাদিনে কুমিল্লার প্রায় ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা করে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরলপ্রাণ অনেক মানুষকেও বিভ্রান্ত করে খেপিয়ে তোলে তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে, ফেসবুক-ইউটিউবের মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য ও গুজব ছড়াতে থাকে সারা দেশে।’

‘অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্ব সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে না থেকে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে, যেখানে তাদের ভূমিকা হওয়ার কথা ছিল ভিন্ন। তাদের কাজ-কর্মে এটা স্পষ্ট যে, কুমিল্লা থেকে শুরু করে সারা দেশে তাণ্ডবের এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। আর এ ঘটনাগুলোর মাস্টারমাইন্ড বিএনপির সিনিয়র নেতারা।’

ফেসবুক পোস্টে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যগুলোও ধীরে ধীরে মুছে দিয়েছে পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল ও সরকারেরা। বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে ধর্মের মনগড়া ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, স্বাধীনতার সত্য ইতিহাসকে ধামাচাপা দিয়ে একটি অসহিষ্ণু, বাংলাদশেক অন্ধকারাছন্ন দেশে পরিণত করার চেষ্টা করেছে তারা বারবার। অমুসলিম জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে ভাঙচুর ও তাণ্ডবের মাধ্যমে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সবসময়ই সচেষ্ট বিএনপি-জামায়াতের মতো পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। এবারের ঘটনাতেও ব্যতিক্রম নেই।’

পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে এমন কাজ করা সম্ভব না উল্লেখ করে ওই ভিডিওতে আরও বলা হয়েছে, ‘কুমিল্লার নানুয়ার দিঘীর পাড়ের ওই মণ্ডপ থেকে কুমিল্লার সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বাসার দূরত্ব মাত্র ৩০০ গজ। ফেসবুকে দুষ্কৃতিকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে সকাল ৮টার মধ্যে মণ্ডপের আশেপাশে হাজারও উত্তেজিত মানুষ এসে ভিড় জমায়। মণ্ডপের পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যরা মেয়র মনিরুল হককে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। তিনি যখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন, তখন বেলা ১০টা।’ ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখ্য যে, মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হয়েছেন।’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দলের সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ তুলে ওই ভিডিওতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামের জে এম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যাদের মধ্যে ৯ জন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী।’

সরকারবিরোধী যেকোনো কাজে ভিপি নুর পটভূমি তৈরি করে দেওয়ার কাজে ভূমিকা পালন করছে বলে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ‘এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠান বানচাল করার জন্য নুরের দলের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের জোটভুক্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে সহিংসতা ছড়ানো শুরু করেছিল। সেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজতের একাংশের কর্মীরা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।’

ভিডিওতে আরও বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে অসাম্প্রদায়িকতাকে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূচনা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে স্বৈর শাসকদের হাতে আমাদের সংবিধান বারবার ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *