ঢাকা: সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লাসহ ৪ জেলা পুলিশের ভূমিকা কেমন ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য ৩ জেলা হলো- ফেনী, নোয়াখালী ও চাঁদপুর। এই জেলাগুলোর পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থেকে শুরু করে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মপরিকল্পনায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথাযথ ছিল কিনা, দায়িত্ব পালনে কারও কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখছে পুলিশ সদরদপ্তর। পুলিশ সদরের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান টিম এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে।
এদিকে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় দায়ের মামলাগুলোর তদন্ত আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকালে কোনো নিরীহ মানুষ যেন এসব মামলায় গ্রেপ্তার না হন সেদিকেও খেয়াল রাখতে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সভা থেকে এ নির্দেশনা দেন আইজিপি। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের প্রোফাইল তৈরি করতেও বলেন তিনি। গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীতে কুমিল্লার একটি ম-পে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে সহিংসতা শুরুর পর তা চট্টগ্রাম,
নোয়াখালী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ফেনী, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সহিংসতা মোকাবিলায় পুলিশ গুলি চালালে ৫ জন নিহত হন। পুলিশ সদরদপ্তরের অনুসন্ধান টিম ওই জেলা পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। ওই টিম জেলার পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কিনা, গুলি চালানোর আগে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা, জেলা পুলিশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লার ঘটনার পর কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল এসব বিষয় খতিয়ে দেখেছে অনুসন্ধান টিম।
কুমিল্লার পূজাম-পে হামলার ঘটনায় জেলা পুলিশ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খবর পাওয়ার পর কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তাতে কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় যেসব পুুলিশ সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে অনুসন্ধান টিম।
জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের একটি দল আমাদের জেলায় এসেছিল। কাজ শেষে তারা ফিরে গেছে।
১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কয়েকটি পূজামণ্ডপ এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে’ একজনের মৃত্যু হয়। পরদিন পুকুর থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় করা ২৬ মামলায় ২০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ জন এজাহারভুক্ত এবং ১১১ জন সন্দেহভাজন। তাদের মধ্যে ছয়জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফয়সাল ইনাম কমলের ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দিতে বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতার সম্পৃক্ততার তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জবানবন্দিতে কমল হামলার উসকানিদাতা হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। নোয়াখালীর এসপি শহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের একটি দল অনুসন্ধানের জন্য নোয়াখালী এসেছিল।
চৌমুহনীতে হামলার ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তাদানে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকা; আবার দু-একজন যারা ছিল, তারাও নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সদরদপ্তরের টিম এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি টিম সেখানে গিয়ে অনুসন্ধান করেছে। দায়িত্ব পালনে চৌমুহনীতে পুলিশের কোনো অবহেলা ছিল কিনা, গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা তা অনুসন্ধান করেছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি সাইফুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ তিনটি কমিটি করেছে। কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলায় এই তিনটি কমিটি কাজ করছে। আমি নিজেও নোয়াখালী জেলা পরিদর্শন করেছি।