১৯৬ এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত

Slider জাতীয়


বিদেশগামী শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা, টাকা নিয়েও বিদেশ না পাঠানো এবং কখনও কখনও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগে ১৯৬টি জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এরমধ্যে চূড়ান্তভাবে সাতটি এজেন্সির লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ বাতিল করে।

বিএমইটি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ৯২৯/১ শেওড়াপাড়া কাফরুলের মেসার্স ওরোবা ট্রাভেলসকে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবধরনের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। একইভাবে ২০৪, শহীদ নজরুল ইসলাম সরণি, বিজয়নগরের আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেটের মেসার্স আহমদ আল আমিন লিমিটেডের কার্যক্রম ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। অপর দিকে ৮৯, বিজয়নগর (দ্বিতীয় তলা)-এর মেসার্স আল মানারাত ওভারসিসের কার্যক্রমও ব্যুরো তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুধু এই তিনটি প্রতিষ্ঠান নয়, বিদেশগামীদের সাথে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে আরো ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করে জনশক্তি ব্যুরো। অবশ্য এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এক দিনে স্থগিত হয়েছে তা নয়, ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যুরো থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে পরবর্তী সময়ে অভিযোগকারীর সাথে সালিস শেষে শর্তসাপেক্ষে মুচলেকা দিয়ে পুনরায় শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

এ দিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মসংস্থান সেলে সম্প্রতি খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, একজন কর্মকর্তার টেবিলে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের প্রতিনিধির সাথে প্রতারিত বিদেশগামীদের সালিস চলছিল। সালিসে সমঝোতার পর সিলেটের হবিগঞ্জের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বাইরের একটি ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের সামনে বলেন, আমার ভাতিজাকে দুবাই পাঠানোর কথা বলে এজেন্সির মালিক দেড় বছর আগে দেড় লাখ টাকা নিয়েছিল চেকের মাধ্যমে। আমরা টাকা দেয়ার পর বারবার তার কাছে ধরনা দিলেও তিনি আমার ভাতিজাকে বিদেশ পাঠাতে গড়িমসি করতে থাকেন। এরই মধ্যে এজেন্সির মালিক মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে টাকা চাইতে গেলে তারা আমাদেরকে হুমকি দেন। বলেন যাকে টাকা দিয়েছিলা তার কাছ থেকে গিয়ে এখন টাকা নাও। একপর্যায়ে উপায় না পেয়ে টাকা পেতে জনশক্তি ব্যুরোতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। অভিযোগের পর ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক বৈঠকের পর মীমাংসা হয়। এই দেড় লাখ টাকা এজেন্সি মালিকের স্ত্রী সন্তান ছয় কিস্তিতে ফেরত দিতে রাজি হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম কিস্তির ২০ হাজার টাকা এ দিন তারা দিতে রাজি হয়েছে। বাকি টাকা প্রতি মাসে দেবে বলে স্ট্যাম্পে চুক্তি হবে। আমরা স্ট্যাম্পে আপসনামায় স্বাক্ষর করলেই তার লাইসেন্সের কার্যক্রম খুলবে। এতদিন আমাদের কারণে তার ব্যবসা বন্ধ ছিল।

জানা গেছে, শুধু ওই কামরুল ইসলাম প্রতারিত হয়েছেন তা কিন্তু নয়, এমন অনিয়ম, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ব্যুরোতে অভিযোগের ভিত্তিতে এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যাদের অভিযোগের বিষয়গুলো সমাধান করা যাচ্ছে না তাদের লাইসেন্স একপর্যায়ে বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সাতটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

গতকাল রাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) হাসান মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত, বাতিলের বিষয়গুলো ব্যুরোর কর্মসংস্থান পরিচালক মিজানুর রহমান সাহেব দেখেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোভিডের পর যেসব দেশে ফ্লাইট ওপেন হয়েছে ওই দেশগুলোতেই শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে। পরে জনশক্তি কর্মসংস্থানের পরিচালক মিজানুর রহমানের বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *