রাতে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপের প্রতিমায় পবিত্র কোরআন রেখে ইকবাল হোসেন বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। এরপর পুলিশ এসে যখন পবিত্র কোরআন উদ্ধার করে, তখন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর পূজামণ্ডপ এলাকায় একে একে জনসমাগম বাড়তে থাকে। তখন তিনি ঘটনাস্থলে এসে মানুষের সঙ্গে মিশে যান। একপর্যায়ে দিঘির উত্তর-পশ্চিম কোনায় বিক্ষোভে অংশ নেন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রামে যান তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে ইকবাল কার প্ররোচনায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছিলেন, তা বলেননি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত পুলিশের একজন কর্মকর্তা একটি সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার রাত নয়টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ শনিবারও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে যাওয়া সদস্য ও জেলা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখে। এ ছাড়া গণমাধ্যমের কাছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের পাঠানো ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের শেষাংশে বিক্ষুব্ধ জনতার ভিড়ে ইকবালকে দেখা গেছে।
কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড়ে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার ইকবাল ছাড়াও আরও তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা জাহান নীপা রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার অন্য তিন আসামি হলেন ইকরাম হোসেন, মাজারের হুজুর মো. হুমায়ুন কবির ও খাদেম মোহাম্মদ ফয়সল।
আদালত এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুরে ইকবালকে কক্সবাজার থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে আনা হয়। এরপর রাত নয়টা পর্যন্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা ও পূজামণ্ডপের প্রতিমা থেকে গদা সরিয়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল হোসেন পুলিশকে আরও কিছু তথ্য দেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনি অসংলগ্ন কথাও বলছেন।
পরে পুলিশ তাকে শনিবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লার আদালতে হাজির করেন। সঙ্গে অপর তিন আসামি ইকরাম, হুমায়ুন ও ফয়সলকে আদালতে আনা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মফিজুল ইসলাম খান আদালতের বিচারক মিথিলা জাহান নীপার কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এই সময় বিচারক সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে পুলিশ তাদের আদালত থেকে নিয়ে যায়। এই সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন কুমিল্লার সদর কোর্টের পরিদর্শক সালাউদ্দিন আল মাহমুদ।
রিমান্ডে নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ইকবাল পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখেন। ইকরাম ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার বিষয়টি জানান। হুমায়ুন কুমিল্লা নগরের দারোগাবাড়ি মসজিদের হুজুর এবং ফয়সল মাজারের খাদেম। ওই মাজার থেকেই পবিত্র কোরআন নিয়ে পূজামণ্ডপে রাখেন ইকবাল।
আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল জানিয়েছেন, গদাটি তিনি একটি পুকুরে ফেলে দেন। তবে কোন পুকুরে ফেলেছেন, সেটি বলেননি। তাকে নিয়ে পুলিশ ওই গদা উদ্ধার করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে যাবে। এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। এখনো আসল ব্যক্তিদের নাম বলেননি তিনি। পুলিশ তদন্ত করছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘির পাড়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত পূজামণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করা হয়। এরপর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা নগরের চারটি মন্দির, সাতটি পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ছাড়া জেলার সদর দক্ষিণ, দেবীদ্বার ও দাউদকান্দিতে প্রতিমা ভাঙচুর ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় নয়টি মামলা হয়। এতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জামায়াতের তিন কাউন্সিলর, বিএনপির কয়েকজন কর্মীসহ ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত ইকবালসহ ৫০ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।