দুই দিনে বিলীন দুই শতাধিক বসতভিটা

Slider রংপুর


শিমুল দেব,উলিপুর (কুড়িগ্রাম): অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবার গেট খুলে দেওয়ায় উত্তরাঞ্চলে অসময়ে হঠাৎ বন্যা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি এলাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন। গত দুই দিনে তিস্তা বেষ্টিত কুড়িগ্রামের উলিপুরে দ্ইু শতাধিক বসতভিটাসহ গাছপালা, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মানুষ নদী ভাঙনে হুমকির মুখে থাকা বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার গাছপালা কেটে সরাচ্ছেন। উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, থেতরাই, গুনাইগাছ, বজরা এলাকায় দেখা দিয়েছে এ নদী ভাঙন। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মানুষজন গত দ্ইু দিনের নদী ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

হরিপুর ইউনিয়নের কারেন্টবাজার চর মাদারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রনজিনা বেগম, আবিজান বেওয়া, শিউলী বেগম, নুর মোহাম্মদ, সাজেদুল ইসলামসহ অনেকে জানান, গত দুই দিন থেকে নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নদীর প্রবল স্রোতে বসতভিটা, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ, গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের বাড়িঘর সরিয়ে এবং গাছপালা কেটে বাঁধ, উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছে। হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম সরকার জিমি জানান, ইউনিয়নের ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডে তিস্তার তীব্র

স্রোতের কারণে বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলি জমিসহ প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২০ থেকে ১৫০টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সাত থেকে আটশ একর ফসলি জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ৬০ থেকে ৭০টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে।

বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বাবলু জানান, ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোটা এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে ধান, সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। সাদুয়া দামারহাট, পশ্চিম বজরা, চর বজরা, পূর্ব বজরাসহ অনেকগুলো চরের ফসলি জমি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে।

গুনাইগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, ২০টি চর এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে হাজার থেকে বারোশ একর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ থেকে ২০টি পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।

দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি জানান, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের বেশিরভাগ চর তলিয়ে গেছে। ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার তিস্তা নদীর বাম তীর রয়েছে। সেখানে ১২শ মিটার জায়গায় ব্লক (বোল্ডার) দিয়ে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬টি গ্রোয়েন রয়েছে। বাকি দীর্ঘ যে বামতীর তা অরক্ষিত রয়েছে। ফলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদী শাসনে মহাপরিল্পনা গ্রহণের কাজ চলছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙন রোধ সম্ভব হবে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *