রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে থাকা পুরুষ সাম্বার হরিণ নতুন করে আরো দুটি নারী সঙ্গী পেল। এ নিয়ে পার্কে সাম্বার হরিণ হলো ৬ টি। এদের মধ্যে নারী সাম্বার ৪ টি আর পুরুষ সাম্বার হরিণ হলো দুটি। সঙ্গমের মৌসুমে পুরুষ দুটি বেশ ক্ষীপ্ত ও বদমেজাজি হয়ে পড়ত। কোনো নারী সাম্বারের সঙ্গে মিলিত না হতে পেরে ক্ষীপ্ত হতো পুরুষ সাম্বার। এ সময় পার্কে কর্মরত স্টাফরা সাম্বারের আক্রমনের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এবার আরো দুটি নারী সঙ্গী পাওয়াতে পুরুষ সাম্বার হরিণ দুটি সঙ্গীময় সময় কাটাবে পার্কের আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে। ঢাকা বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিট মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি নারী সাম্বার হরিণ হস্তান্তর করেন। এখন নিবির পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে পার্কের একটি মিনিয়াম এনক্লোজারে। নির্দিষ্ট সময় পরে অন্য সাম্বারদের সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হবে বড় বেষ্টনীতে।
জানাযায়, দুটি সাম্বার হরিণ খামার বাড়িতে আছে জেনে অভিযান চালায় নরসিংদীর জাফর আহমেদ চৌধুরীর বাগান বাড়িতে। সেখান থেকে হরিণ দুটি উদ্ধার করা হয়। সাম্বার হরিণ ব্যক্তিগত ভাবে লালন পালন অবৈধ জেনে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন খামার বাড়ির কর্তৃপক্ষ। চিত্রা হরিণ পালনে অনুমতির সুযোগ থাকলেও সাম্বার হরিণের ক্ষেত্রে ২০১৭ বিধিমালায় অনুমতি নাই। এ আইনটি জানা ছিলা বলে সাম্বার হরিণ দুটি সেচ্ছায় দিয়ে দেন খামার মালিক । পরে দেশে বিরল এমন দুটি মাদি সাম্বার হরিণ উদ্ধার করে সাফারি পার্কে পাঠানো হয়।
ঢাকা বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিটের পরিদর্শক নিগার সুলতানা জানান, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম স্যারের লিখিত আদেশ ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান খাজা তালুকদার স্যারের দিক নির্দেশনায় আমরা ওই খামার বাড়িতে রক্ষিত দুটি মাদি সাম্বার উদ্ধার করি। পরে পরিচর্যা শেষে গাজীপুর সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন ২০১৭ সালের হরিণ পালন বিধিমালায় চিত্রা হরিণ পালনের অনুমতি থাকলেও সাম্বার হরিণ পালনের অনুমতি নাই। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী তফসিল ১ অনুযায়ী এ প্রজাতীটি সংরক্ষিত। তবে খামার কর্তৃপক্ষ এ আইনের ব্যাপারে না জানায় তাদের কাছে দুটি সাম্বার রেখেছিল। পরে তারা বিষয়টি বুঝে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে।
সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সাজ্জাত মোহাম্মদ জুলকার নাইন মানিক জানান, লোহার খাঁচায় করে পরিবহন করাতে হরিণ দুটোর শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া ছিলে গেছে। আমরা মিনিয়াম এনক্লোজারে রেখে আইসোলেসন করছি। এখন নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসা চলছে। এমনিকে সুস্থ রয়েছে সাম্বার দুটি।
পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, সাম্বার হরিন আমাদের দেশে প্রায় বিরল। চট্টগ্রাম অঞ্চলে কিছু কিছু কদাচিৎ চোখে পড়ে। নারী সাম্বার ধূষস বাদামী রঙের হয়। আর পুরুষ সাম্বার কালচে ধূষর রঙের হয়ে থাকে। নারী সাম্বার শিং ছাড়া হলেও পুরুষ সাম্বার হরিণের ঝটলা শিং গজায়। সাম্বার হরিণ তৃণভোজী প্রাণী।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান জানান, রাতে দুটি নারী সাম্বার হরিণ সাফারি পার্কে আনা হয়েছে। পরে এদের একটি মিনিয়াম এনক্লোজারে রাখা হয়েছে। কদিন পরিচর্যা শেষে অন্যগুলোর সঙ্গে বেষ্টনীতে ছেড়ে দেওয়া হবে।