ইসমাইল হোসেন, গাজীপুর: আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এবার গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের নির্বাচন তফসিলে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার খবরে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
শ্রীপুর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে শতভাগ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলীয় চেয়ারম্যান বর্তমান। ২০১৬ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা বিজয়ী হয়। কিন্তু কাওরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডলের মৃত্যু জনিত কারণে ২০১৯ সালে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়। ২০১৯ সালের কাওরাইদ ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে মাঠে থাকা ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন প্রার্থীই কেন্দ্র লুটের অভিযোগ করেন। অভিযোগ মতে ভোটের দিন সকাল ১১ টার মধ্যে সকল ভোট কেন্দ্রে ব্যালট লুট হয়ে ভোট হয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে।
কাওরাইদ ইউনিয়নের ইতিহাসে ২০১৯ সালে অনষ্ঠিত প্রথম উপ-নির্বাচনে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ইতিহাস ভোটারদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। একই সাথে ২০১৯ কাওরাইদ ইউনিয়নের জন্য ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।
প্রথমত: এই নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্তিতা হয়নি। কারণ সকাল ১১ টার মধ্যে সকল কেন্দ্রের ভোট লুট হয়ে যায়। অতপর ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে তাদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়। কাওরাইদ ইউনিয়নের জনগণ ভোটের এই দৃশ্য পূর্বে এমনভাবে কোনদিন উপলব্ধি করেননি।
দ্বিতীয়ত: নির্বাচনের পর ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ঘটে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। ১৯ এর উপ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান মন্ডল ও কাওরাইদ ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বেপারী সহ তিন জনকে নিজ নিজ বাড়ী থেকে আটক করে নিয়ে যায় গাজীপুর ডিবি পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় চাঁদাবাজি মামলা (মামলা নং-৭৪(০৯)২০১৯) দায়ের হয়। মামলার বাদী জনৈক আরিফ মন্ডল আদালতে আপোষনামা দিলে আসামীরা জামিন পায়। এক সপ্তাহের অধিক সময় কারাগারে থাকা আসামীরা কারামুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে। কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বেপারী অসুস্থ মর্মে কে বা কারা ভুয়া খবর দিয়ে আব্দুল হাই বেপারীর পরিবারের কাছ থেকে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
ঘটনার প্রেক্ষাপট বলছে মামলার বাদী আরিফ মন্ডল নিজেও আসামীদের সাথে গ্রেফতার হয়। কিন্তু পরদিন সকালে আরিফ মন্ডল ডিবির হাজত থেকে বেরিয়ে মামলার বাদী হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলাটি সাজানো মর্মে জনশ্রুতি আছে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, কামরুল হাসান মন্ডল আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন কামরুল মন্ডল ও তার অনেক কর্মীদের নির্যাতন করা হয়। নির্বাচনের পর কামরুল মন্ডল ও তাকে সমর্থন করার অভিযোগে প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ও জনৈক জাহাঙ্গীর আলমকে সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ভোটাররা বলছেন, নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করা ও সমর্থন করার কারণে ওই ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। ফলে ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনার প্রেক্ষিতে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচন করার সুযোগ কমে গেলো। স্থানীয় আওয়ামীলীগ বলছে, বিগত সময় থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের সময়ে দল আরো সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকবে আশা করি।
প্রসঙ্গত: আব্দুল হাই বেপারী ১৯৯২ ও ১৯৯৮ সনে দুইবার কাওরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়ে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেণ। একই সাথে তিনি স্থানীয় যুগিরসিট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আব্দুল হাই শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকও। কামরুল হাসান মন্ডল উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আওয়ামী যুবলীগের সক্রিয় নেতা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় আওয়ামীলীগের এই দুই নেতার কারাবরণ দু:খজনক ঘটনা বলে মনে করছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ। পরিস্থিতি এমন হলে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, কাওরাইদ ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ সমর্থিত কোন প্রার্থীর বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে বি এন পি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন কাওরাইদ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে, না বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় চেয়ারম্যান পাওয়া যাবে, তা সময়ই বলে দিবে।