🌹উইয়ের সর্ব কনিষ্ঠ উদ্যোক্তা পুণ্য মালিথার লাখপতি হয়ে ওঠার গল্প🌹

ঢাকা: উইয়ের সর্ব কনিষ্ঠ উদ্যোক্তা পুণ্য মালিথা, সে উইয়ের একজন গর্বিত সাবস্ক্রাইবার।উই থেকে আয়ের টাকা দিয়েই সে সাবস্ক্রাইবার হয়েছে।উই থেকে আয়ের টাকা দিয়েই সে মাস্টার ক্লাস করেছে এবং উই সামিটের অফলাইন টিকেট কিনেছে। পুণ্য মালিথা উইতে যুক্ত হয় গত বছর মানে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট। পুণ্যর বর্তমান বয়স ১৩ বছর ৪ মাস। পুণ্য মালিথা সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের বারিধারা শাখার ইংলিশ ভার্সনের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।

চলুন পুণ্য মালিথার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুনি তার মায়ের মুখ থেকেই।
প্রশ্ন: পুণ্য কেমন করে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলো? সে বিষয়ে একটু যদি একটু ক্লিয়ার করে বলতেন…
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। সব কিছু সম্ভব হয়েছে মহান আল্লাহর রহমতে।তিনি চেয়েছেন বলেই সব সম্ভব হয়েছে। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে।

আসলে মা হয়ে মেয়ের কথা কি বলবো,এযুগের বাচ্চারা মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে।মোবাইল ছাড়া তারা কিছুই বোঝে না। অথচ আমার বাচ্চারা সবার থেকে একদম আলাদা। মাশাল্লাহ। মা হিসেবে আমি একটু শক্ত।বাচ্চাদেরকে মোবাইল ব্যবহার করতে দেই না।তারা সারা দিনে সকালে ৩০ মিনিট ও বিকালে ৩০ মিনিট কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় পায় অনলাইন ক্লাসের বাইরে।ঐসময়টুকুতে পুণ্য বসে বসে ইউটিউবে রান্না দেখে।

ছোট বেলা থেকেই সে রান্না করতে ভীষণ পছন্দ করতো। সুযোগ পেলেই সে রান্না ঘরে ঢুকে যেত।প্রথম দিকে রান্না ঘরে ঢুকলে বকাঝকা করলেও গত বছর যখন স্কুল বন্ধ হয়ে যায় তখন সারাদিন ঘরে বসে বিষণ্ণতায় ভুগতো। তখন সময় কাটানোর জন্য কম্পিউটারে বসে ইউটিউবে রান্না দেখতো। রোজ বিকেলে আমি না করা স্বত্বেও সে এটা ওটা বানিয়ে আমার সামনে দিত।আমার কাছের মানুষরা জানেন খাবার দেখলে আমি হুঁশ হারিয়ে ফেলি। মেয়ে যখন নতুন কোনো খাবার বানিয়ে আমার সামনে এনে দেয় তখন মেয়ের প্রতি খুব মায়া হয়। আমিও ভেবে দেখলাম সারাদিন বসে বসে গেমস খেলার চেয়ে তার পছন্দের কাজটাই সে করুক।তাতে তার সময়ও ভালো কাটবে, আমিও মজার মজার খাবার খেতে পারবো।তাই মেয়েকে আর কাজে বাধা দিলাম না।

সুযোগ পেয়ে সে রোজ কিছু একটা বানিয়ে আমাদের সামনে দিবে।আমি মেয়ের হাতের মজার মজার খাবার খেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেই।মেয়ের জন্য মন থেকে দোয়া করতাম। ওর স্কুল বন্ধ হলো ২০২০ এর মার্চ মাসে। স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগটাকে সে ভালোভাবে কাজে লাগায়।
২০২০ সালের আগস্ট মাসের ২৩ তারিখে আমার ছোট বোন মেহেরুননেসা পুণ্য ও আমাকে উইতেযুক্ত করে দেয়।যেহেতু সে রান্না করতে পছন্দ করে তাই তার খালামনির পরামর্শ মতো তাকে একটা রান্নার পেইজও খুলে দেয় ওর বড় বোন সুরীতি মালিথা। এরপর পুণ্য মালিথা যা কিছু রান্না করে উইতে তা পোস্ট দেয়। এর মধ্যেই তার অনেক অর্ডার আসতে শুরু করে মাশাল্লাহ। ছোট বলে আমি তাকে কোনো অর্ডার নিতে দিতাম না। এবছর জুলাই মাসের শুরুর দিকে স্বপ্ন পূরণ উদ্যোক্তাদের গল্প অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারের জন্য তার ডাক পড়ে।সে কিছুতেই সাক্ষাৎকার দিবে না।আমি তাকে অনেক বোঝাই তবুও সে রাজী হয় না।এক পর্যায়ে সে আমাকে শর্ত দেয় সে সাক্ষাৎকার দিবে তবে একটা শর্ত আছে। জানতে চাইলাম কি শর্ত? সে বললো, তাকে মাঝে মাঝে অর্ডার নিতে দিতে হবে।আমি তার শর্তে রাজী হয়ে গেলাম। আল্লাহর রহমতে ৯ জুলাই উই হাটবাজার থেকে তার অর্ডার নেয়া শুরু হয়।আসলে আমরা এত অর্ডারের জন্য ঐ সময় প্রস্তুত ছিলাম না।প্রথম অর্ডার আসে আমাদের বাসাবো খিলগাঁও এর কো অর্ডিনেটর তানজিনা আফরোজ নিশো আপুর কাছ থেকে। বালাচাও এর প্রথম অর্ডার আসে ওর খালামনি মেহেরুননেসার কাছ থেকে।বাট ডেলিভারিম্যান জনিত সমস্যার কারণে তার ডেলিভারি পিছিয়ে যায়। ঐ সময় পুণ্যর শৈশব শিক্ষক ডালিয়া মিস ও ফাহিমা সুলতানা আপা লোক পাঠিয়ে বাসা থেকে পুণ্য মালিথার বালাচাও সংগ্রহ করেন।সেই অর্থে বালাচাও এর প্রথম ক্রেতা তারা দুজনেই ।

এপর্যন্ত পুণ্যর বালাচাও ও অন্যান্য খাবার এর সর্বোচ্চ ক্রেতা ওর খালামনি মেহেরুননেসা উইতে তার অর্ডার নেয়া শুরু হয় ৯ জুলাই ২০২১ থেকে। তার মোট কাস্টমারের সংখ্যা ১০৫ জন। তবে বেশির ভাগই তার রিপিট কাস্টমার। আলহামদুলিল্লাহ। উইতে মাত্র ৩ মাস ২ দিনে তার মোট সেল ১ লক্ষ ৯ হাজার ৮৫০ টাকা। পুণ্যর খাবার সম্পর্কে উই কো অর্ডিনেটর তানজিনা আফরোজ নিশে আপা বলেন, “উই হাট বাজারে পুণ্য মালিথার কাস্টার্ড ডোনাটের প্রথম কাস্টমার ছিলাম আমি।আমাকে দিয়েই পুণ্যর অর্ডার নেয়া শুরু।এত ছোট একটা মেয়ে এত চমৎকার কাস্টার্ড ডোনাট কেমন করে বানায় আমি তা বুঝি না।

আমি নিজেও একজন শেফ।আমার মতো শেফকে খুশি করা চাট্টিখানিক কথা নয়।পুণ্যর কাস্টার্ড ডোনাট এতই মজা যে আমি তার কাস্টার্ড ডোনাটের ৪ বারের রিপিট কাস্টমার হয়েছি। আমি পুণ্য মালিথার কাস্টার্ড ডোনাটের ১০০ তম রিপিট কাস্টমার হতে চাই। শুধু তাই নয় গত রবিবার উই সামিটের মিটাপের জন্য ৪৫ টা কাস্টার্ড ডোনাট অর্ডার করি তার কাছে। সবাই তার কাস্টার্ড ডোনাট খেয়ে অনেক প্রশংসা করেছে। পুণ্যকে আদর করে মনি বলে ডাকি।ওকে আমি নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করি।আমি পুণ্যর কাজ দেখে মুগ্ধ। পুণ্যকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। ইনশাআল্লাহ পুণ্য একদিন নামকরা শেফ হবে।”

সব শেষে কথা বলবো আমরা উইয়ের সর্ব কনিষ্ঠ লাখপতি উদ্যোক্তা পুণ্য মালিথার সাথেঃ

প্রশ্ন: আপনার লাখপতি হয়ে ওঠার অনুভূতি প্রকাশ করুন।

উত্তর: আসলে আমি ছোট মানুষ আমি আর কি বলবো,আমি একটা কথাই বলবো প্রথমেই আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি চেয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।তারপর আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার মায়ের প্রতি।মা পাশে ছিলেন বলেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি।এরপর আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার দুই খালামনির প্রতি একজন হলেন মেহেরুননেসা খালামনি, অন্যজন হলেন তানজিনা আফরোজ নিশো খালামনি।এই দুই জনের সাপোর্টের কারণে আজ এত তাড়াতাড়ি আমি লাখপতি হতে পেরেছি।এরপর আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই উইয়ের সকল আন্টি ও আঙ্কেলদের প্রতি। তারা পাশে না থাকলে আমার পক্ষে কখনই লাখপতি হয়ে ওঠা সম্ভব হতো না।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার নানু ও মামা মামীদের প্রতি। সব শেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি উই জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপুর প্রতি। নিশা আপু যদি উই এর মতো এত বড় একটা প্লাটফর্ম না বানাতেন তাহলে আমার মতো এত ছোট মানুষের পক্ষে কখনই লাখপতি হওয়া সম্ভব ছিল না। কখনই এত ছোট বয়সে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব ছিল না। আজকে আমাকে এই যে হাজার হাজার মানুষ চেনে এর পুরো অবদান উইয়ের।আমাকে তৈরি করেছে উই। আমি পুরোপুরি উইয়ের তৈরি। তাই নিশা আপুর জন্য মন থেকে দোয়া করি আল্লাহ যেন ওনাকে সুস্থ রাখেন।ভালো রাখেন। উইয়ের সকল আঙ্কেল আন্টিদেরকে বলবো আপনারা সকলেই এই ভাবে আমার পাশে থাকবেন সব সময়। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সকলের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে আমি আরও অনেক দূর যেতে চাই।আমার সিগনেচার প্রডাক্টের নাম “বালাচাও”

এবার জেনে নেই পুণ্য মালিথার পরিবারে কে কি করেন? পুণ্য মালিথার মা খায়রুননেসা রিমি পেশায় শিক্ষক, নেশায় লেখক।তিনি সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যুক্ত আছেন।পুণ্য মালিথার বাবা কলেজে শিক্ষকতা করেন।তারা দুই বোন।বড় বোন সুরীতি মালিথা বিবিএ তে পড়ে। পুণ্য মালিথা বাসাবো, মায়াকাননে থাকেন। পুণ্যর জীবনের লক্ষ্য নামকরা শেফ হওয়া।তার স্বপ্ন তার নিজের একটা ক্যাফে বা রেস্টুরেন্ট থাকবে। আমরা দোয়া করি পুণ্য তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাক। পুণ্য মালিথার পেইজের নাম Punno’s kitchen। আপনারা সবাই পুণ্যর পেইজ থেকে ঘুরে আসবেন। ভালো লাগলে বেশি বেশি অর্ডার করে পাশে থাকবেন। পুণ্য মালিথা ও তার পরিবারের সকলের জন্য রইলো শুভকামনা।