গাজীপুরঃ গাজীপুরে আওয়ামীলীগ এর রাজনীতিতে প্রকাশ্যে দ্বন্ধ এর৷ আগে জেলা হেড কোয়ার্টারে তেমনভাবে দেখা যায়নি। প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. রহমত আলীর জীবদ্দশায় আভ্যন্তরিণ কোন্দলের কারণে জেলা সদরে তার অবস্থান তেমন ছিলনা। তবে রহমত আলীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিদ্বন্দী শ্রীপুরের বর্তমান সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজ গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের হেড কোয়ার্টার থেকে সৃষ্টি। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রহমত আলী তার পরিবারের মনোনয়ন রক্ষা করতে পারেননি। রহমত আলী জীবদ্দশায় তার আসনে আওয়ামীলীগ এর এমপি হয় ইকবাল হোসেন সবুজ। দলীয় কোন্দলের কারণে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তও জেলা আওয়ামীলীগে তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি রহমত আলী। পরবর্তী সময় রহমত আলীর মেয়েকে নারী সাংসদ বানান প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে রহমত আলীর রাজনৈতিক পরিবার থেকে নেতৃত্বে রয়েছেন তার মেয়ে। ধারণা করা যায় আগামী সংসদ নির্বাচনে শ্রীপুরে রহমত আলীর ছেলে অথবা মেয়ের সাথে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগীতা হবে বর্তমান এমপির ।
গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জে আওয়ামীলীগ এর দুইজন নেতা পর্যায়ক্রমে মনোনয়ন পান। শহীদ ময়েজ উদ্দিন এর মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বর্তমান সাংসদ। কালিগঞ্জের সাবেক সাংসদ আখতারুজ্জান জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। আসন পুন:বিন্যাসের পর কালিয়াকৈরে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হচ্ছেন এ্যাড. আ ক ম মোজাম্মেল হক। বর্তমানে তিনি মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ।
গাজীপুর সদরে ২০০৪ সালে আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর তার উত্তরসূরি জাহিদ আহসান রাসেল দলীয় মনোনয়নে এম পি হচ্ছেন । বর্তমানে তিনি যুবওক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ।
২০১১ সালের পর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন হওয়ার বাতাস বইতে থাকে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ালীগ থেকে মেয়র পদে দুই জন প্রার্থী মাঠে আসেন ২০১৩ সালের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র এ্যাড আজমত উল্লাহ খান পরাজিত হন । মেয়র হন বি এন পির অধ্যাপক এম এ মান্নান। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোয়নয় পান এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম। দলীয় নির্দেশে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন এ্যাড আজমত উল্লাহ খান। জাহাাঙ্গীর আলমের পক্ষে আজমত উল্লাহ এবং আজমত উল্লাহর পক্ষে জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারণায় প্রতিফলিত হয় পাওয়া না পাওয়ার চাপা ক্রন্দন।
২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র হওয়ার পর আভ্যন্তরিণ বিরোধ ভেঙ্গে জাহাঙ্গীর ও আজমত উল্লাহ এক সাথে পথচলা শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ে একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর -আজমত উল্লাহর বন্ধন ছিড়ে যায়। বর্তমানে জাহাঙ্গীর ও আজমত উল্লাহ খান পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ালীগ সভাপতি এ্যাড আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম পৃথক কর্মসূচিতে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। গেলো শুক্রবার মহানগর আওয়ামীলীগ এর একটি দলীয় কর্মসূচিতে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পাশে আজমত উল্লাহ খানকে দেখা যায়নি। পরবর্তী সময় আজমত উল্লাহ খান যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তার বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠে। এই অবস্থায় আগামীকাল মঙ্গলবার গাজীপুরে জাহাঙ্গীর ও আজমত উল্লহ খান দলীয় সভানেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি দিয়েছেন।
জানা গেছে টঙ্গীতে আজমত উল্লাহ খান ও গাজীপুর সদরে জাহাঙ্গীর আলম কর্মসূচি পালন করবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, অডিওকে ঘিরে চলমান বিশৃঙ্খল অবস্থা দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর সাংগঠনিক ভাবে সমাধান করা হবে। এতে আওয়ামীলীগ দলীয় নেতাকর্মীরা আরো কয়েকদিন বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।