প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারাই দেশে এবং বিদেশে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে, তারা জনগণের শত্রু। নিউ ইয়র্কের লাগর্ডিয়া এয়ারপোর্টের ম্যারিয়ট হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থানরত কিছু লোক (সরকারের) সমালোচনা এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্যস্ত। এমন সময় তারা এসব করছে, যখন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। কেউ যাতে দেশে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি ভোগের নয় বরং আত্মত্যাগের জন্য। জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া কখনো জনগণের কল্যাণের কথা ভাবেননি বরং তারা ক্ষমতাকে ভোগ এবং দ্রুত অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করতেন- অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। কিছু মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন হলো তারা কীভাবে এই কথাগুলো বলার সুযোগ পায়? তারা সরকারের তৈরি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি তাদের কোনো আদর্শ থাকে, তারা কখনোই তা করতে পারে না। যারা সরকারের সমালোচনা করছে তাদেরকে বিএনপি-জামায়াত চক্রের কেনা গোলাম আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। হাইকোর্ট তাদের সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাতের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তার ছেলে (তারেক রহমান) ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এফবিআই দুর্নীতিতে তাদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যার জন্য বিএনপি টাকা দিয়েছিল এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ বলছে। জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে ভোট দিয়েছে এবং বিএনপিকে বর্জন করেছে। জনগণের প্রতি বিশ্বাস থাকলে বিএনপিকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান প্রথম হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থায় কারচুপির সূচনা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে খালেদা জিয়া সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যান। ওই নির্বাচনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি এবং জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র্রেও দুর্নীতির সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। তার দুই ছেলে তারেক জিয়া ও কোকো দেশ থেকে অর্থ পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। সরকার তাদের পাচার করা অর্থের একটি অংশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সেখানে বিলাসী জীবন যাপন করাই তাদের চরিত্র উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের দীর্ঘ সময় পর আবার ক্ষমতায় এলে, দেশের জনগণ প্রথম বুঝতে পারে যে- সরকার জনগণের সেবক এবং জনকল্যাণে কাজ করে। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, তখনই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে থাকে।
বাংলাদেশ বিমানে চড়ার বাখ্যা:
এদিকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারে করে দুটি কারণে নিউ ইয়র্কে এসেছি। প্রথম কারণ হচ্ছে- অন্য এয়ারলাইন্সের পরিবর্তে দেশি একটি এয়ারলাইন্সকে অর্থ প্রদান। এভাবে আমাদের নিজের হাতেই এ ধরনের অর্থ থেকে যায়। তাছাড়া যদি একটি বিমান উড্ডয়ন না করে বিমানবন্দরেই থেকে যায়, তাহলেও প্রতিদিন বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ হয়। এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো স্থগিত রয়েছে। তার সরকার ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে পুনরায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কোনো কোনো মানুষকে একথাও বলতে শুনেছেন যে, তারা বিমানে করে নিউ ইয়র্কে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাভর্তি বস্তা ও ট্রাঙ্ক নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী এই অভিযোগকারীদের কাছে জানতে চান যে, এই ট্রাঙ্ক ও বস্তাগুলো যায় কোথায়? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে ১৫০টি স্যুটকেসে অর্থ ভর্তি করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন এবং সৌদি আরবের লকার ভাড়া করে ওই অর্থ রেখেছেন। তার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর কয়েক লাখ ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারপোর্টে আটক হয়েছিলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় তিনি মুক্ত হন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান:
ওদিকে অভিন্ন ভেন্যুতে নাগরিক সংবর্ধনা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিক বিনিয়োগ আকর্ষণে তার সরকারের দেয়া ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে মাতৃভূমিতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, মার্কিন নাগরিকদের পাশাপাশি আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিউ ইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন। বলেন, তার সরকার দেশের এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন উদ্দীপনা প্যাকেজ ও অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে। সারা দেশে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশি এবং আমেরিকানরা এ থেকে লাভবান হতে পারেন। প্রবাসীরা এতে আরও সুবিধা পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে ভালো সুযোগ দিচ্ছি। প্রবাসীদের আরও সুবিধা (অন্যদের তুলনায়) দেয়া হচ্ছে। সুতরাং তারা এ সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে হেলসিঙ্কি হয়ে ১৯শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। সপ্তাহব্যাপী সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শনিবার স্থানীয় সময় সকালে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন এবং ১লা অক্টোবর ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি হয়ে তার দেশে ফেরার কথা। সফরের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের সঙ্গে সব কথা না বললে সমস্যার সমাধান হবে না। ভারসাম্যহীন উন্নয়ন টিকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য ব্যবস্থা না নিলে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে না। সাংবাদিকদের কাছ থেকে তিনি কী চান? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদপত্র সমাজের আয়না। সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সুতরাং গণমাধ্যমে নির্বিচারে সমালোচনা নয় বরং তাদের গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা উচিত। সাংবাদিক ও সংবাদপত্রে মিথ্যা অভিযোগ করে কাউকে খাটো না করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতুন বই ‘শেখ হাসিনা: বিমুগ্ধ বিস্ময়’ হস্তান্তর:
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের নতুন ‘শেখ হাসিনা: বিমুগ্ধ বিস্ময়’ প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে মন্ত্রী মোমেন বইটি তুলে দেন। নিউ ইয়র্কের লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে বই হস্তান্তরকালে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন।