ইসমাইল হোসেন, গাজীপুরঃ গাজীপুর সিটি মেয়র এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমার নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন শহীদ হয়েছেন তার সাড়ে তিন বছর পর আমার জন্ম হয়েছে। আমাদের মহান জাতির পিতা আমাদের জন্মভূমি উপহার দিয়েছেন। আমি যেদিন থেকে কথা বলা শিখেছি সেদিন থেকে জাতির পিতার ছবি দেখে ও তার কথা শুনে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছি। এর পর আওয়ামীলীগ। আমার জীবনের চাইতে প্রিয় আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ এর ক্ষতি হউক আওয়ামীলীগে ভাঙ্গন হউক চাই না। প্রয়োজনে আমি জীবন দিতে প্রস্তুত।
শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার ইউটিসি বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় মেয়র বলেন, আওয়ামীলীগ ও জাতির পিতার বিষয়ে কোন আপোষ হবেনা । অনেকে অনেক ধরণের মিথ্যা আচরণ করছেন আমার ছাত্র জীবনেও বিরোধিতা করেছেন। আমি যখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি তখনও ওরা আমার বিরোধিতা করেছেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে যখন মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদকের পদটি দিয়েছেন তখন বিরোধিতা করে মিছিল করতে চেয়েছিলেন আপনারা। আমার নেত্রী আমাকে যখন মেয়র নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেয় তখনও তারা বিরোধিতা করেছেন। আমি আমার একজন গার্ডিয়ানের হাতে ধরেছিলাম এবং বলেছিলাম আওয়ামীলীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও নৌকার বিরোধিতা করবেন না। আমি গোপনে গোপনে অনেকবার নৌকার পক্ষে থাকতে বলেছি। আমি উনাকে বলেছি ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। যারা জামাত এবং রাজাকার ছিল, সেই সময়ে তাদের কারণে আমাদের এই হাজ৷র হাজার লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। রক্তে গাথা এই জন্মভূমি ও আমার জাতির পিতাকে নিয়ে যারা কুৎসা রটাতে চেষ্টা করেছেন, তারা আমার ছাত্র জীবন থেকে পদে পদে বিরোধীতা করেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দোয়ায় এবং এই এলাকার আওয়ামীলীগ, সহযোগী সংগঠন ও আপামর জনগনের সহযোগিতায় আমি আপনাদের দায়িত্বটুকু পালন করতে পেরেছি।
মেল বলেন, আমি নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে টঙ্গী সহ এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোট দেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সন্তানের মত আমাকে এলাকার আওয়ামীলীগ, সহযোগী সংগঠন ও নগরবাসীকে সেবা দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদেরকে নেতৃত্ব এনে দিয়েছেন কাজ করার জন্য। আপনারা দেখেছেন এই এলাকা ইউনিয়ন পরিষদ ছিল । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর একক সিদ্ধান্তে এই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন করে দিয়েছেন আওয়ামীলীগ ও এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন এই এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করার জন্য। দেশি বিদেশী সহযোগীতায় এখানে ৮০০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ ধরেছি। আমি নগরবাসীর হাতে পায়ে ধরে বলেছি, যেকোন মূল্যে শহর করতে হবে। এই শহর আপনাদের শহর। আপনারা দেখেছেন পদ্মা সেতু হচ্ছে, মেট্রো রেল সহ পরিকল্পিত হাইওয়ের সুফল দেশবাসী পাওয়া শুরু করেছে। সেই জন্যই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা এওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। নেত্রী আমাদের দেশের আঠারো কোটি মানুষের জন্য সম্মান এনে দিয়েছেন।
সাম্প্রতিক বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার নামে মিথ্যা ফেইসবুক আইডি তৈরি করে মিথ্যা ভাবে আমার নামে আমার জাতির পিতার নামে কুৎসা করে তারা যেন রাজপথে আসতে পারে এবং বি এন পি জামাতকে রাজাপথে আসার পথ তৈরী করে দিতে পারে সেই জন্যই এই কৌশল। গাজীপুরের মত জায়গায় আমরা ২১ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা সহযোগীতা ও দোয়ায়। আমার স্পষ্ট কথা হচ্ছে এই গাজীপুর আমাদের জন্মভূমি। এই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের জন্মভূমি। তাজউদ্দীন আহমদের সাথে মোশতাকেরা বেঈমানী করে আমাদের প্রিয় নেতার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল । এই গাজীপুরে শহীদ ময়েজ উদ্দিনকে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছিল। আমাদের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে জীবন দিতে হয়েছে এলাকার কাজ করতে গিয়ে। সেই সব জিনিসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আজকে একটি মহল উঠে পরে লেগেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা রাসূলের সময়ও ছিল, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সময়ও ছিল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়ও আছে। আমাদের মহনগর আওয়ামীলীগ এর আশে পাশে ঘাপটি মেরে আছে ওরা।
তিনি বলেন, গাজীপুর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী। আমি মনে করি আমাদের আওয়ামীলীগ, আমাদের জাতির পিতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যপারে কুৎসা রটালে আমি কঠিন অবস্থান নিব। আমি বলেছি মিথ্যা সব সময় মিথ্যাই থাকবে। মিথ্যার মুখোশ একদিন প্রকাশিত হবেই। শহরবাসী, মহানগর আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনকে আমি ধৈর্য ধরতে বলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে শহর বানাতে দিয়েছেন । এখানে একটি লোকও কর্মহীন থাকবেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মায়ের স্থান থেকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ওরা অনেককে ফোন দিয়েছে, অনেককে ভূল বুঝিয়েছে। আমরা জনগনের প্রতিনিধি লক্ষ লক্ষ জনতা আজকে ঘর থেকে বের হয়েছে। আমি বলেছি আমার কোন প্রটোকল লাগবেনা ।
মহানগর সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৩ হাজার টন ময়লা হয়। আপনারা জানেন কোরবানীর চামড়া লুটপাট বন্ধে আমি ইটালির রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠা করার জন্য ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি বলেছি ওয়র্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলরদের নিয়ে আল্লাহর ঘর তোয়াফ করার জন্য সৌদি আরব যাব। আমি দিল্লি ও ইতালি যাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম। যাওয়ার একদিন পরেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমি যাওয়ার একদিন পরেই কাজটি করেছে। আমি জানি কারা কারা ধানের শীষ করেছিলেন, কারা কারা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিলেন। দু একশ লোক দিয়ে জুতার মিছিল করান, প্রয়োজনে লক্ষ লক্ষ লোকের জুতার মিছিল হবে। তখন কিন্তু ফেইসবুক বন্ধ করতে পারবেন না।
আমি বলেছি, আওয়ামীলীগের একজন আদর্শিক কর্মীর জন্য প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দিব। আমরা আওয়ামীলগকে সু-সংগঠিত করছি, ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করছি, যুবলীগকে সংগঠিত করছি, মহিলা আওয়ামীলীগ সহ সকল সহযোগী সংগঠনকে সুসংগঠিত করছি। কৃষকলীককে লক্ষ লক্ষ চারা গাছ উপহার দিয়েছি যেন মানুষ অক্সিজেন পায় । কে কি করেছেন সব আমরা জানি। সবার ইতিহাস আমাদের জানা আছে। প্রয়োজনে আমরা তা নগরবাসীকে জানাব। এখানে মন্ত্রী মহোদয় আছেন, সংসদ সদস্যরা আছেন সর্বোপরী আমাদের আওয়ামীলীগ আছে। আমার মহানগরে যারা সন্ত্রাস করে, মাদক ব্যবসা করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে। আমার মায়ের স্থাণে থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া চাই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে জনসভায় সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী মোজাম্মেল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এসএম মোকছেদুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এসএম আলতাফ হোসেন, কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষ, আব্দুল কাদের মণ্ডল, মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ বিএসসি, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিনা ইউনুস, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আশরাফুল আলম আসকর, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদ, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সুমন আহমেদ শান্ত বাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।