ঢাকাঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনসমূহের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে চিঠি দেয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে অভিহিত করেছেন সাংবাদিক নেতারা। বিএফআইইউ’র এই পদক্ষেপকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছেন তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বেলা ১২টায় রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছেন তারা। আজ বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সাংবাদিক নেতারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবকে টার্গেট করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের চিঠি দেয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
তারা এই বিষয়টি জানেনই না। এতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এই চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রতিকার চাই। একইসঙ্গে কোন সাংবাদিক নেতার একাউন্টে মানি লন্ডারিংয়ের লেনদেন হয়ে থাকলে তাও প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। আপনারা এটাকে ভয় মনে করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোল্লা জালাল বলেন, অবশ্যই ভয়ভীতি মনে করছি। নিশ্চিতভাবে এটা উদ্দেশ্যমূলক। সকল সংগঠনের নেতাদের এতে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কা তৈরি করেছে। এটা দুরভিসন্ধিমূলক। আমরা সরকারের জানতে চাই এটা কি। নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের প্রতিবাদে আগামীকাল দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
১১ সাংবাদিক নেতার পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব এভাবে তলব করা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কেননা এর আগে কোন দিন কোন সময়ে এরকম ঘটনা ঘটেনি। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনসমূহের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাওভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা মনে করি। নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কেন, কি কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এতে সারাদেশের সাংবাদিকদের মনে নানা ধরনের আশঙ্কারও সৃষ্টি করেছে। অনেকে বিএফআইইউ’র এই পদক্ষেপকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছে।
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়টি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে। কারণ গোটা বিশ্বে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশের সরকার ও সচেতন সমাজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোন ধরণের বাধার সৃষ্টি কিংবা কোন ধরনের চাপ প্রয়োগের কৌশল মেনে নেয় না, নিতে পারে না। তাই সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এরই মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, বিএফআইইউ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে যে চিঠি দিয়েছে তাতে তথ্য পাওয়ার আগেই তথ্য চাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি? সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিএফআইইউ’র দেওয়া চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় সমাজের মানুষের কাছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তথা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রতিকার দাবি করছি। কেননা এতে করে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার প্রয়াস চালানো হয়েছে। যা কারো কাম্য নয়।
মসিউর রহমান খান বলেন, আমরা আপনাদের ভোটে নির্বাচিত। তাই আপনাদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে কারণেই বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাদের কাছে এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। সে বিবেচনায় আমরা দৃঢ়তার সাথে বলছি, আমাদের নেতৃবৃন্দের ব্যাংক হিসাবে যদি কোন অস্বাভাবিক লেন-দেন কিংবা কোন ধরনের মানি লন্ডারিং কিংবা জঙ্গি অর্থায়নের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর যদি তা না হয় তবে সেটাও যেন যথাযথ গুরুত্বের সাথে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লড়াই-সংগ্রাম, নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংকটে আপনারা আমাদের পাশে থেকেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতেও আমরা আপনাদের পাশে চাই। সাংবাদিকদের সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে কোন ধরনের হুমকি ধামকিতে আমরা অতীতে যেমন পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হবো না। আগামী দিনে যে সব কর্মসূচি দেওয়া হবে তা সফল করার লড়াইয়ে আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের-বিএফইজে সভাপতি এম. আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনসমূহের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে। যেসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল ,ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের-বিএফইজে সভাপতি এম.আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের নাম রয়েছে।