প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বিকালে রাসেলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গুলশান থানায় তাদের নামে প্রতারণার মামলা হওয়ার প্রেক্ষিতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে। তবে তারা আগে থেকেই র্যাবের নজরদারিতে ছিলেন। তাদের দেশ ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। র্যাব তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের সদর দপ্তর উত্তরায় নিয়ে যায়। আজ শুক্রবার তাদের আদালতে প্রেরণ করা হবে।
এর আগে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়।
আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির একজন গ্রাহক মামলাটি করেছেন। মামলা নম্বর-১৯। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আরিফ বাকের গত ২৯শে মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে ইভ্যালিতে মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি পণ্য অর্ডার করেন। এগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্য দিবসের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও তারা দেয়নি। ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে সমাধান পাওয়া যায়নি। অফিসে গিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে খারাপ ব্যবহার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাসেলের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এছাড়াও পণ্যের জন্য আগাম অর্থ দিয়ে না পাওয়ার পাশাপাশি ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দেয়ার মামলায় অভিযোগ করা হয়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে মাত্র আড়াই বছরের মাথায় সরবরাহকারী কোম্পানি ও গ্রাহকদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়েছে ইভ্যালি। এত অল্প সময়ে এই বিপুল টাকা কোথায় গেল তার হদিস এখনো মেলেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এর বড় অংশের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত জুলাই মাসে দুদকের আবেদনে ইভ্যালির শীর্ষ কর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
প্রত্যক্ষদর্শী ও র্যাব জানায়, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের ৫/৫/এ নম্বরের নিলয় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় অভিযান চালায় র্যাবের সদস্যরা। ওই বাসা থেকে কী জব্দ করা হয়েছে তা র্যাব জানায়নি। পরে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে একটি কালো গাড়িতে করে তাদের র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযানের পর র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মো. খাইরুল আলম জানান, ‘গুলশান থানায় ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষিতে রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ইভ্যালি থেকে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী এবং ইভ্যালির পক্ষে প্রায় ১০০ জন সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একটি পক্ষ তাদের টাকা ফেরত চান। আরেকটি পক্ষ দাবি করেন যে, রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার মধ্য দিয়ে ই-ভ্যালির সমস্ত সম্পদ বেহাত হয়ে যেতে পারে। এতে প্রকৃত গ্রাহকরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এজন্য তারা রাসেলকে আরও বেশি সময় দিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানান। কোনো কোনো গ্রাহক তাদের টাকা ফেরত না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ইভ্যালি থেকে প্রতারণার শিকার হারুনূর রশীদ জানান, গত জুন মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি পালসার বাইক কেনার অর্ডার দিই। আমাকে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার জন্য মাত্র ২১ দিন সময় নেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ইভ্যালি তাকে পণ্যতো দেয়নি বরং তাকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। তিনি তার টাকা ফেরতের দাবি করেন। এদিকে, বিক্ষুদ্ধ ইভ্যালির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবক জানান, রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হলে গ্রাহকরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্ণধারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কেউই তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাননি। তিনি আরও জানান, ইভ্যালির রাসেলকে যথাযথ নজরদারির মধ্যে রেখে আরও কিছুদিন সময় দেয়া উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে তাকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত বা পণ্য দিতে বাধ্য করা যেতে পারে। তাকে ধরে নিয়ে গেলে গ্রাহকরা পণ্য বা টাকা কিছুই পাবে না।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার এসআই নাজমুল হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমরা সেখানে উপস্থিত হই। সেখানে বিক্ষুব্ধ গ্রাহক এবং রাসেলের পক্ষের লোকজন তাদের দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে নজর রাখা হয়।
তিনি আরও জানান, রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিক্ষুব্ধরা একটি মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলটি থামিয়ে দেয়। পরে সেখানে থাকা বিক্ষুব্ধরা শান্তিপূর্ণভাবে যে যার স্থানে চলে যায়।