স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমি সমালোচনা পছন্দ করি। কারণ এটা আমাকে শক্তিশালী করে। এই সমালোচনা অবশ্যই সঠিক হতে হবে। গতকাল জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিলের ওপর বিরোধীদলীয় এমপিদের জনমত
যাচাইয়ের আলোচনার পরে দেয়া বক্তৃতায়
এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দিতে উঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সদস্যদের ধন্যবাদ। ওনারা বেশ এনার্জি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে যান, আমিও চালিয়ে যাবো আপনাদের সঙ্গে। কাজেই কোনো অসুবিধা হবে না।
আপনারা দোষত্রুটি খুঁজে পাবেনই। সমুদ্রের মধ্যে দুই বালতি ময়লা ফেললে সমুদ্র নষ্ট হয়ে যাবে না, পানি নষ্ট হয়ে যাবে না। বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় আমরা কী করেছি স্বাস্থ্যখাতে আর আপনারা কী করেছেন- এ বিষয়টি একটু তুলে ধরতে চাই জনগণের সামনে। এ সময় বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যখাতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা জানি আপনারা কী বলতে পারেন। তাই আজকে প্রস্তুত হয়ে এসেছি। সারাদিন লাগবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ১৪ হাজার ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ৩০ রকমের ওষুধ ফ্রি দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। আপনারা এসে ওটাকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা হলো স্বাস্থ্যসেবায় আপনাদের ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বিএনপি’র সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সময় কী হয়েছে আমরা জানি না। আপনাদের সময় দুর্নীতির কারণে মানুষ মারা গেছে, গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা তো উন্নয়ন করে পুরস্কার পেয়েছি। আর আপনারা পুরস্কার পেয়েছেন ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। আমরা আর কিছু বলতে চাই না। আপনাদের বিষয়ে বলতে গেলে আমার সময় শেষ হয়ে যাবে। আজকে সংসদ জমছে ভালো। আপনারা কথা বলবেন, আমরাও উত্তর দেবো। পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বিএনপি’র সময় কি কোনো হাসপাতালে ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছিল? গত দশ বছরে যে হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যবস্থা আছে? তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ১৩ বছর আপনারা ক্ষমতায় আছেন। দেশের গণতন্ত্রের সূচক কোথায় আছে? প্রতিদিন গণমাধ্যমে এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে দুর্নীতির খবর প্রকাশ হচ্ছে না। এগুলো পড়েন। গত ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে এই বিষয়গুলো অহেতুক দোষারোপ না করে আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। গণতন্ত্রের যে সংকট চলছে, গণতন্ত্রের যে সংকট দাঁড়িয়ে গেছে, এই সংকট থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসবো, মানুষের ভোটাধিকার আমরা কীভাবে নিশ্চিত করবো- এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করি। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র হারুন সাহেব বলেছেন ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কেনা হয়েছে। কিন্তু এটা কোথায় হয়েছে আমার জানা নেই। এটা কেনা হয়নি। ভুল তথ্য দিলে জনগণ ভুল বুঝে, এটা সঠিক না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০ হাজার ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে যন্ত্রপাতি রয়েছে। এটা ব্যবহার হলে একটা সময় পরে তা নষ্ট হয়ে যায়। একটা সময় এটা ঠিক করতে হয়। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তা আমরা করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা টিকার কথা বলেছেন তিন হাজার টাকা। আপনাকে তো আগে জানতে হবে, তারপর বলতে হবে। অর্ধেক নয়, আপনাকে পুরো বিষয় নিয়েই বলতে হবে। যখন টিকা দেয়া হয়, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে দেয়া হয়। এটার সঙ্গে জনবল, সংরক্ষণাগার জড়িত রয়েছে। এখানে শুধু টিকার দাম তিন হাজার টাকা না।
দ্রুত দেশে করোনা ভ্যাকসিন তৈরি হবে
এদিকে বাংলাদেশে অতি দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার আছে বলেও তিনি জানান। গতকাল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইন প্রণয়নের সময় দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, আমরা শুধু ভ্যাকসিন আনছি না, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অতি দ্রুত দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। দেড় কোটি মানুষকে ডাবল ডোজ টিকা দেয়া হয়ে গেছে। চীন থেকে ৬ কোটি ডোজ টিকার নিশ্চয়তা পাওয়ার পর দেখলাম এই টিকা আনতে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, টাকা যত লাগুক টিকা আনতে হবে। আমরা কোভ্যাক্স থেকে ৫ কোটি টিকা পাবো। সব মিলিয়ে ১৬ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার আছে। ভ্যাকসিন গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে উন্নতি হয়েছে, হাসপাতালের সার্ভিস ক্ষমতার যে উন্নতি হয়েছে, সেটা করোনার সময় বোঝা গেছে। কেউ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যায়নি, যেতে পারেননি। দেশে মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে উন্নতমানের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কোভিড, নন-কোভিড, ডেঙ্গু সব চিকিৎসা দেশে হয়েছে। আমরা ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করেছি। করোনার চিকিৎসা ভালো হয়েছে বলেই আজ মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫-এ নেমেছে। যেখানে আমেরিকায় এখন দেড় হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। ভারতেও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।