গৌরনদী (বরিশাল)ঃ প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের আড়াই মাস পরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলমারিতে পাওয়া গেল কিছু ব্যালট পেপার ও দুইশ’ ব্যালটের মুড়ি। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ খান জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করা হয়। প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র খুঁজতে গিয়ে ওইদিন দুপুরে বিদ্যালয়ের স্টিলের আলমারি খোলা হয়। এ সময় আলমারির ভেতরে ইউপি নির্বাচনে ওই বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত কিছু ব্যালট পেপার ও দুইশ’ ব্যালটের মুড়ি পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক বলেন, গত ২১শে জুন অনুষ্ঠিত বার্থী ইউপি নির্বাচনে এই বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নির্বাচনের আগের দিন ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়ের আলমারির চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চাবি হস্তান্তর করে চলে যান। করোনার প্রভাবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এতদিনে ওই আলমারি খোলা হয়নি।
বিদ্যালয় খোলার পরে আলমারির ভেতরে এসব ব্যালট ও ব্যালটের মুড়ি পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানানো হয়েছে।
বার্থী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী ও সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল আহসান খোকন অভিযোগ করেন, বিগত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তাকে পরাজিত করার অভিযোগ তিনি প্রশাসনের কাছে করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তার অভিযোগ আমলে নেয়নি। এখন বিদ্যালয়ের আলমারির ভেতরে ব্যালট পেপার ও ব্যালটের মুড়ি পাওয়ার ফলে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল।
খায়রুল আহসান খোকন বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বার্থী ইউনিয়নে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার মিলে তাদের যোগসাজশে ওই দুইশ’ ব্যালটের ভোট কারচুপি করে গোপনে বাক্সে ঢুকিয়ে আমার প্রতিপক্ষ সোবাহান হাওলাদারকে বিজয়ী করা হয়েছে। পরাজিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী শিপ্রা রানী অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহানাজ বেগমকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলার হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউল ইসলাম বলেন, ‘আলমারিতে পাওয়া ব্যালট ও মুড়ির সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মামুনুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় গৌরনদী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার দুপুরে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মিজানুর রহমান তালুকদারকে কমিটির আহ্বায়ক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল জলিলকে সদস্য সচিব ও উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুল বাশারকে কমিটির সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ওই ভোটকেন্দ্রের কিছু ব্যালট পেপার ও দুইশ’ ব্যালটের মুড়ি পাওয়ার ঘটনাটি আমি অবহিত হওয়ার পর এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ওই কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার তদন্ত পূর্বক লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলেই আমরা পরিষ্কার ধারণা পাবো যে, সেখানে ভোট গ্রহণে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কিনা। নাকি প্রিসাইডিং অফিসাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।