গাজীপুরের সাংবাদিক সমাজ মুক্তি চায়!

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর: ১৯৭১। মহান মুক্তিযুদ্বে লক্ষ লক্ষ প্রাণ ও ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম। রক্ত মাখা একাত্তরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। ২৪ ঘন্টা আগে ১৫ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় গাজীপুর। বিজয়ের একদিন আগেই গাজীপুরে উড়ে যায় বিজয়ের পতাকা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের ৭ দিন আগে ১৯শে মার্চ প্রথম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস। ইতিহাস বলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯শে মার্চ ১৯৭১ এ প্রথম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় গাজীপুরে। এই কারণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গাজীপুর প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধস্থল, ইতিহাসে একটি উজ্বল অধ্যায় হয়ে ফোটে রয়েছে।

১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক বিজয়ের একদিন আগে গাজীপুরে বিজয় হয়। ২৬ মার্চের ৭দিন আগে পাক হানাদার বাহীনির উপর প্রথম আক্রমণ হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যুদ্ধের শুরুর আগে শুরু শেষের আগে শেষ হয় গাজীপুরে। ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদান বিবেচনা করেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্ধ দেন গাজীপুরে। এটি গাজীপুর বাসীর প্রতি আওয়ামীলীগ সরকারের কৃতজ্ঞতার বহিপ্রকাশ। ধন্যবাদ আওয়ামীলীগ সরকারকে।

মহুকুমা থেকে গাজীপুর জেলা রুপান্তর হওয়ার সময় সাংবিধানিক প্রয়োজনে গড়ে উঠে গাজীপুর প্রেসক্লাব। গুটি কয়েকজন সাংবাদিকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গাজীপুর প্রেসক্লাব সুনামের সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। সাংবাদিকের সংখ্যা কম হওয়ায় তেমন কোন অমিল ঘটেনি। ২০০১ সালে বি এন পি সরকার হস্তক্ষেপ করে প্রেসক্লাবকে দলীয় করণ করার চেষ্টা করে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পাল্টা দলীয় করণ করার চেষ্টা করে। ফলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফসল হিসেবে গাজীপুরে একাধিক সংগঠন গড়ে উঠে। এতে শুরু হয় সাংগঠনিক গোলযোগ। এক পর্যায়ে ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে প্রেসক্লাব সরিয়ে রথখোলায় গণ গ্রন্থাগারের পরিত্যাক্ত ভবনে নেওয়া হয় । বর্তমানে গাজীপুর প্রেসক্লাবের নিজশ্ব কোন ভবন নেই। নেই সাংবাদিকদের ঐক্য। অনৈক্যের কারণে ইতোমধ্যে সাংবাদিকরা আভ্যন্তরিনভাবে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে আছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে গাজীপুর জেলায় ১৪/১৫ টি প্রেসক্লাব হয়ে গেছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এর দুটি পক্ষ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে গাজীপুর প্রেসক্লাবে। একটি অংশ কমিটি গঠন করে একচেটিয়াভাবে প্রেসক্লাব পরিচালনা করতে থাকেন। আরেকটি অংশ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব এর জন্মদিনে পাল্টা কমিটি গঠন করে । দুই কমিটি একই অবস্থানে থেকে প্রেসক্লাবের কর্তৃত্ব ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার কারণে বি এন পি , অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বি এন পিপন্থী সাংবাদিক সংগঠনের সাংবাদিকেরা আওয়ামীলীগের একটি অংশের সাথে মিশে যায়। ফলে গাজীপুর প্রেসক্লাবে নিরাকার বি এন পি আওয়ামীলীগ এর সাথে মিশে দুটি পক্ষ তৈরি করে। দুটি পক্ষ আওয়ামীলীগ এর হলেও একটি পক্ষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মো: জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী হয়ে সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা উপভোগ করছে। আওয়ামীলীগ এর অপর অংশ ক্ষমতাসীন হয়েও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

ইতিহাস বলে, ২০০১ সালে বি এন পি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের হস্তক্ষেপে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাংবাদিকেরা বি এন পির সাথে নিরাকার হয়ে যায়। বর্তমানে আওয়ামীলীগর এর দুই অংশের সাথে বি এন পি পন্থী সাংবাদিকরা মিশে গিয়ে একাকার হয়। ফলে গাজীপুরে সাংবাদিকদের সংগঠন রাজনীতীতে জড়িয়ে পরে। রাজনৈতিক কারণে গাজীপুরের সাংবাদিকদের সংগঠন ও সাংবাদিকেরা অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পরে গেছে। এতে গাজীপুরের মানুষ গণমাধ্যমের প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

সাধারণ সাংবাদিকেরা বলছেন গাজীপুরে সাংবাদিকতা রাজনীতিমুক্ত চাই। সাংবাদিকদের শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ সংগঠন চাই। সাংবাদিকেরা নিরাপদে নিজের ঘরে থেকে সাংবাদিকতা করতে চায়। না হয় গাজীপুর বাসী বস্তুনিষ্ঠু সাংবাদিকতার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেই থাকবে। এতে অপরাধ লুকিয়ে থাকবে অনন্তকাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *