ঢাকাঃ দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি। ৫৪৩ দিন বা এক বছর পাঁচ মাস ২৪ দিন বন্ধের পর খুলছে স্কুল-কলেজ। ১২ই সেপ্টেম্বর রোববার খুলবে স্কুল-কলেজ। তবে শুরুতে পুরোদমে খুলছে না তা। চলতি ও পরবর্তী বছরের এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে আর বাকিরা করবে সপ্তাহে একদিন। কর্তৃপক্ষ চাইলে একই দিন থেকে খুলতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ও। করোনায় লণ্ডভণ্ড শিক্ষাক্যালেন্ডার এবার সংস্কারের পালা। প্রাণঘাতী করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তিনবারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার পর এলো সুস্পষ্ট ঘোষণা।
একাধিকবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তাগাদা দিয়েছিল। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যদের সায় না থাকায় খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হয়েছে আন্দোলন, দাবি তুলেছিলেন অভিভাবকরাও। ২৪শে আগস্ট ইউনিসেফ জানায়, স্কুল-কলেজ বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাতে সায় দিয়েছে কোভিড মোকাবিলায় গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি। গতকাল শুক্রবার চাঁদপুরে মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা-পরিকল্পনাসহ নানান বিষয় তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
খুলছে স্কুল-কলেজ
আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। এছাড়া বৃহস্পতিবার করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষে মত দেয়া হয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খোলা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ও
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিল চাইলে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে আমরা আবারো বসবো। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিল নেবে। আমরা ভাইস চ্যান্সেলরদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা চেয়েছিলেন, অন্ততপক্ষে সব শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারলে ভালো হয়। সে অনুযায়ী অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। ২৩শে আগস্টের পর ১লা সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা ঘরে থাকতে থাকতে তাদেরও যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে। সেদিকে আমাদের নজর দেয়া দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে করোনা টিকার আর কোনো সমস্যা নেই। যেখান থেকে যতটুকু পারছি আমরা নিয়ে আসছি। খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের টিকা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত আছেন, তাদের পরিবারসহ যেন টিকা দেয়া হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পরামর্শক কমিটির পরামর্শ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মত দেয়া হয়। পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে এসেছে। টিকাও দেয়া হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়। এছাড়াও দেশে করোনার সংক্রমণ নিম্নগামী। দিনকে দিন তা কমছে। গতকাল শুক্রবার সংক্রমণের হার ছিল ১০.৭৬।
যেভাবে চলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
স্কুল-কলেজ খুললেও পুরোদমে ক্লাসে যাবে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও শুরুতে সব শ্রেণির ক্লাস হবে না। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস হবে। প্রথমে বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং আগামী বছরের পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে। বাকি শ্রেণির ক্লাস শুরুতে একদিন করে হবে। পরে অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে চলবে অনলাইন ও টেলিভিশন ক্লাস।
মানতে হবে যা যা
স্কুল-কলেজ খোলার পর মানতে হবে তিনটি নির্দেশনা। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ সাজাতে হবে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। পাঁচ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী বসা এবং পাঁচ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করাতে হবে। এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হবে।
‘টিকার আওতায় আসবে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরাও’
এবার ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও করোনার টিকার আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ?শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। স্কুল-কলেজগুলো খোলার জন্য আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ই সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বেশিরভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। এ ছাড়া ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে।
এদিকে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৭ই আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন টিকা নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের মধ্যে ৩০ হাজার টিকা পেয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। যাদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭২ জন।
কবে হবে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি শেষ হচ্ছে। পূর্ব ঘোষিত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে হচ্ছে শঙ্কা দেখা দিয়েছে পরীক্ষার্থীদের মাঝে। এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ীই হবে। এসএসসি নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এক্ষেত্রে আমরা যে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি সেখান থেকেই প্রশ্ন করা হবে। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা হচ্ছে।
যা বললেন মাউশি ডিজি
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, নির্দেশনা পেলেই খুলে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের যে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল এবং যে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে, সেগুলো নকল করে নাকি জ্ঞানের মাধ্যমে করেছে, সেগুলো ভালো করে দেখার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয় ক্লাস শুরু করার আগে যা যা করণীয় সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করার জন্য আগেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কাজেই আমরা আশা করি বিদ্যালয় খুলে দিলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।
চোখে পানি আমিশার, মিয়ানের চিৎকার
আমিশা ও মিয়ান দুই বোন। আমিশা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ভাই মিয়ান পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। তারা পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুরের শিক্ষার্থী। তাদের মা লুতফুর নাহার বলেন, টেলিভিশনে কার্টুন দেখছিল দুজন। ওদের বাবা নামাজ পড়তে গেছে মসজিদে। আমি রান্না করছিলাম। হঠাৎ মিয়ান চিৎকার করে। তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে দেখি, মিয়ান চিৎকার করছে আর আমিশা কাঁদছে। মিয়ান আমার কোলে লাফ দিয়ে এসে বলে, মা ১২ তারিখ স্কুল খুলতেছে। আর খুশিতে আমিশার কান্না থামছেই না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন দুপুরে ঘুমালেও আজ চোখে ঘুম নেই ওদের। আমিশা এখন স্কুল ব্যাগ পরিষ্কার করছে। আর মিয়ান বিকালে খেলতে যাবার আগে ড্রয়ার থেকে বের করে রেখেছে পানির পট, ঘড়ি আর বেল্ট। দুজনের খুশি দেখে এতটাই আনন্দ লাগছে- মনে হচ্ছে আমিই স্কুলে যাচ্ছি।
আদনানরা কি আর স্কুলে ফিরবে?
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান আহমেদ। স্কুল বন্ধ থাকায় সবজির দোকান চালায় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় ভেণ্ডাবাড়ী বাজারে। আদনানের বাবা রংপুরে একটি রেস্তরাঁয় কাজ করতেন। চাকরি হারিয়ে দিশাহারা। বাধ্য হয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন এখন। সেইসঙ্গে আদনানের সবজির দোকান দিয়ে চলছে তাদের পাঁচজনের সংসার।
আদনানের মতো কাজে প্রবেশ করেছেন একই উপজেলার শঠিবাড়ীর ছেলে মো. জীবন। জীবন জানায়, তার বাবা কাজ হারিয়ে বাড়িতে এসে বিপদে পড়ে যান। জীবন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোনো অ্যাসাইন্টমেন্ট জমা দেয়নি। জীবন বলে, ‘আব্বায় একায় কাম করলে কামাই হয় না। যা হয় তা দিয়ে সবার পেট ভরে না। আমি সবার বড়। আমি কামে আইলে ভালো আয় হয়। আব্বার কাজে সাহায্য হয়। আর স্কুলে ফিরবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে জীবন বলেছিল, আর স্কুল যাইয়া কি হবে? কোনোরকম পাস দেয়া ছাত্র আমি। কাম না করলে ভাত জোটে না। আর লেখাপড়া করে কি হবে?’
সংসার নিয়ে ব্যস্ত পারুল
এবারের কোরবানির ঈদে স্বামীসহ ঈদ করতে এসেছিল পারুল। সে এবার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বিয়ে হয়েছে জানুয়ারি মাসে। পারুলের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে তার একই এলাকার চার বান্ধবীও। পারুলের স্বামী পোশাক শ্রমিক, থাকে গাজীপুরে। পারুলের বাবা মাইক্রোবাস চালক মো. বাবু বলেন, ‘বেটিক তো পড়াই চিলামই। বিয়াতো দেয়াই লাগতো। এখন বাড়িত বইসা আচিল। এই পোলার বাপ আমার পরিচিত। জমি-জায়গা আছে পোলায় কাম করে। পছন্দ করলো দিয়া দিলাম বিয়া।’
এত অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘এই বয়সে হের মায়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরচে। এগুলা শহরের মানুষের জন্য বয়স কম সমস্যা। হেরা খায় ভেজাল, পুষ্টি পায় না। আমার ব্যাটা, ব্যাটি টাটকা খাইয়া বড় হচে।’
হারিয়ে গেছে হাজারো স্কুল
দীর্ঘ বন্ধে গুটিয়ে গেছে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল। আর হারিয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার স্কুল। এসব ছোট বড় স্কুলে মেলেনি কোনো অনুদান। স্কুল খোলা না থাকায় মেলেনি শিক্ষার্থীদের বেতন। ফলে এসব স্কুল হারিয়ে যাবার পাশাপাশি পেশা পাল্টিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখো শিক্ষক। স্কুল অনেকে ভাড়া দিয়েছেন মেস, গোডাউন বা ফ্ল্যাট হিসেবে।
বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্যানুযায়ী, দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এর অর্ধেকই করোনার অতিমারিতে বন্ধ রয়েছে। তবে ২০ শতাংশ (প্রায় ১০ হাজার) কিন্ডারগার্টেন আর শিক্ষা কার্যক্রমেই যাবে না।
হাসি ফুটেছে টিউশনি করানো শিক্ষার্থীদের
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ হাসান। বাবাহীন এই শিক্ষার্থী টিউশনি করিয়ে চালাতেন নিজের ও ছোট বোনের লেখাপড়ার খরচ। কিন্তু করোনাকালে টিউশনি হারিয়ে বিপাকে পড়ে যান তিনি। আরিফ বলেন, করোনার আগে ৬টি টিউশনি করাতাম। এরপর একে একে টিউশনি বন্ধ হয়ে আয়হীন হয়ে পড়ি। পরিবারের আমি বোঝা হয়ে যাই। মাঝে একটা টিউশনি পাই কিন্তু একটা টিউশনি দিয়ে ঢাকায় থেকে খরচ বহন করা যায় না। এবার স্কুল খুললো যাক, আশা দেখছি। ইন্শাআল্লাহ এবার ঢাকা যাবো, টিউশনিও পাবো। আরিফের মতো লাখো শিক্ষার্থী আশায় বুক বেঁধেছেন। এবার মিলবে টিউশনি। একইভাবে আশার সঞ্চার হয়েছে দেশব্যাপী কোচিং সেন্টারগুলোরও।