ঢাকাঃ ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমণি বুধবার সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার হাতে লেখা একটি বাক্য সামাজিক মাধ্যমে রীতিমত আলোচনার ঝড় তুলেছে।
জামিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে একটি ছাদ খোলা গাড়িতে করে ঢাকার দিকে চলে যান পরীমণি, আর তখন তার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট এবং মাথায় সাদা পাগড়ির মতো করে জড়ানো একটি কাপড়।
এ সময় সেখানে উপস্থিত হওয়া ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়েন ঢাকার সিনেমার এই তারকা – তবে তিনি কারো সাথে কথা বলেননি।
গত ৪ আগস্ট ঢাকার বনানীর বাসা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা তাকে আটক করে। এরপর তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করা হয়।
কয়েক দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল পরীমণিকে ওই মামলায়। আগে জামিনও পাননি তিনি।
তবে শেষ পর্যন্ত জামিন পেয়ে কারাগারের বাইরে বেরিয়েই আবার তুমুল আলোচনায় এসেছেন পরীমণি – এবারে আলোচনা তার হাতে মেহেদী রঙের কিছু লেখা নিয়ে, যা নিয়ে দারুণ সরব সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের প্লাটফরম।
Don’t Me Bitch
পরীমণির হাতে ইংরেজিতে লেখা ছিল ওপরের এই বাক্যটিই – ডোন্ট (ভালোবাসার হৃদয়সূচক তিনটি চিহ্ন) লাভ বিচ। এরপর হাতের মধ্যাঙ্গুল প্রদর্শনের একটি চিহ্ন।
সাতাশ দিন পর কারাগারের বাইরে বের হওয়া অভিনেত্রীর ওই লেখা এবং ছাদখোলা গাড়িতে তার অভিব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, অনেকেই এসব ছবি শেয়ার করতে শুরু করেন।
বনানীর বাসায় ফেরার পর বিবিসি বাংলার সাথে কথা হয় পরীমণির।
হাতে মেহেদীর রঙে আঁকা ওই লেখার মাধ্যমে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন, তা জানতে চাওয়া হলে পরীমণি বলেন, ‘ডেফিনেটলি এটা তো একটা বার্তাই ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এত কথা তো বলতে পারছিলাম না ওখানে বসে, মনে হলো এভাবে পৌঁছাইয়া দেই সবাইকে। এখন এটা দেখে যে মনে করবে, যার মনে হবে, আমাকে বলছে মনে হয়, ওর জন্যেই বলছি আমি।’
‘বিচের সংখ্যা তো অনেক লম্বা, নির্দিষ্ট করে কীভাবে বলবো?’
কিন্তু পরীমণি কাদেরকে ‘বিচ’ বলেছেন?
গুগল জানাচ্ছে ‘বিচ’ শব্দের একাধিক বাংলা অর্থ হতে পারে – যেমন মাদী কুকুর, দুশ্চরিত্রা।
এই ‘বিচ’ কারা জানতে চাইলে পরীমণি বলছেন, ‘যারা বিচ, তাদের উদ্দেশ করে লেখা। যে যে বিচ, যারা মনে করে আল্লাহ, এটা আমাকে লিখছে কিনা, সে-ই বিচ। বিচের সংখ্যা তো অনেক বড়, অনেক লম্বা।’
‘দেখেন না যখন আমি অ্যারেস্ট হইলাম তখন এক রকম অ্যাকটিভিটিজ। আবার যখন জামিন পেলাম, তখন অন্যরকম অ্যাকটিভিটিজ। ওরা হইল বিচ।’
পরীমণি আরো বলেন, ‘ওদের ভালোবাসার দরকার নেই। মুখে এক, মনে এক – ওদের ভালোবাসার দরকার নেই। যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা আমার পাশে থাকলেই হবে।’
কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজের হাতে ওই লেখাটি তিনি লিখেছেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানান পরীমণি।
এখনো সব গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি পরীমণি। তিনি জানান, গ্রেফতার হওয়া ও কারাগারে যেভাবে তাকে সময় কাটাতে হয়েছে, কয়েকদিন পর সবাইকে তার বিস্তারিত জানাবেন।
‘এটা নিয়ে ডেফিনিটলি কথা বলবো। আমাকে তো কথা বলতেই হবে। এটা আমার দায়বদ্ধতা। কিন্তু আমার কিছু সময় লাগবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক লম্বা কথা আছে, আমি বলতে চাই। সত্যি সত্যি বলতে চাই, ডেফিনিটলি আমি বলবো।’
এবার বাসা নিয়ে সংকটে পরীমণি
পরীমণির সাথে যখন বিবিসি বাংলার যখন কথা হয়, তখন তিনি সবেমাত্র বাসায় এসেছেন। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে এখন নতুন সংকটে পড়েছেন চিত্রনায়িকা
বনানীর যে বাসায় তিনি এতদিন ধরে থাকতেন, এতসব ঘটনার কারণে বাড়ির মালিক তাকে অবিলম্বে বাসা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমার বাসা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। সেটা কোনো কথা?’ প্রশ্ন করেন পরীমণি।
‘আমার বাসস্থান কেড়ে নেয়ার অধিকার তো কারো নেই। এই যে ডিস্টার্বটা হলো .. আমি একটা বাসায় থাকি, আমি কাজ করি, আমার বাসা নিয়ে যা যা হলো, এখন আমার বাসা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ আসছে। এখন কি আমি র্যাবের বাসায় গিয়ে উঠবো? এখন আমাকে বাসা কে দেবে?’
‘এত বছর ধরে এই বাসায় রয়েছি, এখন হুট করে কোথায় যাবো?’ – বলেন তিনি।
পরীমণি জানান, প্রতিদিন সাংবাদিক, পুলিশ আসছে যে ভবনে তিনি থাকেন সেখানে, ফলে মানুষ বিরক্ত হচ্ছে।
‘আমি একজন আর্টিস্ট। শুধু মদ আর কি কি জানি পাইছে, শুধু এগুলোই করি না আমি। মিডিয়া ট্রায়ালে ট্রায়ালে আমি শেষ হয়ে গেলাম। মিডিয়া জাজ দিয়ে দিচ্ছে,’ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
পরীমণির হাতের লেখা নিয়ে ফেসবুকে ঝড়
পরীমণি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তার হাতের লেখা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকেই এই লেখাকে পরীমণির সাহসী একটি প্রতিবাদ হিসাবে বর্ণনা করছেন।
যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন লিখেছেন, Don’t love me – bitch এর চেয়ে মধুর প্রতিশোধ আর হয় না।
‘শুধু পরীমণির উপর করা অবিচারের পাল্টা না এটা, হাজার বছর ধরে বাঙালি নারীর সাথে করে আসা প্রেমের নামে সকল হিপোক্রিসি এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক অত্যাচার অবমাননার মুখে এর চেয়ে সপাট চড়ের কথা আমি কল্পনায় আনতে পারছি না। স্যালুট! আজ থেকে, মেহেদি রাঙ্গা হাতের ভিন্ন আরেক অর্থও তৈরি হলো।’
ঝুমা চৌধুরী লিখেছেন, আই লাভ হার ড্যাম কেয়ার অ্যাটিট্যুড অ্যান্ড গাটস।
ফিজিওথেরাপিস্ট মহসিনা মায়া লিখেছেন, আমি ঠিক করেছি, আমি এ লেখা ট্যাটু করবো হাতে…এ ছবি দেখার পর নিজের মধ্যে একটা বল/শক্তি কাজ করছো নিমিষে। এ সমাজের মুখে এতো শক্ত করে চড় মারতে খুব কম মেয়ে পেরেছে।
বিবিসি বাংলার পাতায় আমিনুল বারী শুভ্র লিখেছেন, পরীমণির প্রাণশক্তিতে আমি মুগ্ধ। সাহস এবং প্রতিবাদের ভাষা বিস্ময়কর। এরচেয়ে মধুর প্রতিশোধ আর হয় না।
আর জাফর সাদিক লিখেছেন, কারাগার থেকে জামিনে পরীমণির মুক্তির পর মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে, হাস্যোজ্জ্বল মুখে ভক্ত-অনুরাগীদের সালাম দেয়াটা অনেক কিছু প্রমাণ করে। মেয়েটা হারতে শেখেনি।
তিনি আরো লিখেছেন, মামলার বিচার করবে আদালত। তার আগে পরীমণি বাঁচুক তার কর্মে। মননে হোক আরো পরিশুদ্ধ।
তবে সবুজ চক্রবর্তী দ্বিমত প্রকাশ করে লিখেছেন, জামিন হয়েছে জাস্ট। নিরপরাধ প্রমাণিত হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া চলমান।
সূত্র : বিবিসি