আগন্তুক দুজন আজকেও সেই চায়ের টংএ চা খাচ্ছে আর মাথা নুইয়ে কথা বলছিলো।
১মঃ বাসার কি খবর?
২য়ঃ আর বলিস না যাচ্ছে তাই অবস্থ্যা,কাল ছোট ভাই কল দিলো ওরা আমার ভাগের ৩ মাস বাবা মাকে খাওয়াতে পারবে না,আমি যেন নিয়ে আসি।এ কথা শোনার পর তোর ভাবি বাসার ভিতরে আগুন জ্বালানো শুরু করেছে। ছেলে মেয়ে ২ টাও এখন অতিষ্ঠ।
১মঃ তা তুই এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি?
২য়ঃ যতই হোক বাবা মাতো,আর আমি যেহেতু দুরে তাই বার বার তো যাওয়া আসা করতে পারবো না,তাই চিন্তা করছি এবার আব্বাকে নিয়ে আসবো,৩ মাস থাকার পর আব্বাকে রেখে আম্মাকে এনে ৩ মাস রাখবো।
১মঃ খালা খালু এতে রাজী হবে? তার চেয়ে তাদের ২ জনকে একত্রে নিয়ে আয়,৩ মাস পর দিয়ে আসবি।
২য়ঃ কেন হবে না? তারা ছেলেদের সুবিধা অসুবিধা দেখবে না,আর ২ জনকে একত্রে কিভাবে নিয়ে আসবো? আমার বাসা ছোটো, তোর ভাবি বাচ্চাদের উপর বারতি চাপ পরবে।
১মঃ তা যেতে চাস কবে?
২য়ঃ দেখে সপ্তাহের শেষ দিকে শুক্রবার মিলিয়ে বাড়তি একদিন ছুটি নিতে পারি কিনা।
১মঃ ভালো করে ভেবে দেখ। এখন তোরা যা করোস সব খালা খালুর আড়ালে করো, তারাতো সব বুঝে দেখে তারপরো অসহায়ের মতো চুপ থাকে।এখানে নিয়ে আসার পর তাদের সামনে বসে তোরা এমন কোন আচরন করিস না যাতে কষ্টে তাদের আয়ুষ্কালটা কমে না যায়।
২য়ঃ চেস্টাতো করছি, আর তোর ভাবী, সেতো পরের বাড়ির মেয়ে,সে কেন আমার বাবা মায়ের ঝামেলা সহ্য করতে যাবে?
১মঃ কি বলিস তুই? বুঝে শুনে বলছিসতো?
খালা যখন কালুর সংসারে আসে তখন সে বাড়ির বড় বউ হিসেবে ১৫/২০ জনের রান্নাবান্না, সবাইর তদারকি করে নি, তোর চাচারা তখন পড়াশোনা করে,ফুপুদের একজন ছাড়া সবাই অবিবাহিত ছিলো, জেনে দেখতো তারা খালার একটা বদনাম করতে পারবে কিনা?
২য়ঃ আরে সেই সময় আর এই সময় এক হলো? সময়,মানুষ,রুচি,অভ্যাস সব কিছুরই পরিবর্তন হয়।
১মঃ তাই?
২য়ঃ তাই নয় কি?
১মঃ ভালো। তোদের বাড়িতে ঘর কয়টা?
২য়ঃ আব্বা আমাদের তিন ভাইকে আলাদা আলাদা ঘর করে দিয়াছে,আর তারা থাকে পুরাতন ঘরে।
বাবা মা জীবনের সর্বশ দিয়া তিন ছেলেকে মানুষ করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন।বড় বড় ঘর দেখে ছেলেদের বিয়ে করিয়েছেন। বয়স হয়ে গিয়াছে তাই কখন কি হয়ে যায় এজন্য সুস্থ্য থাকতেই নিজের জায়গা জমি সব তিন ছেলেদের ভিতরে নিয়মানুযায়ী ভাগ বাটোয়ারা করে লিখে দিয়াছেন। আর এটাই ছিলো তাদের দ্বিতীয় বড় ভুল, বলতে জমি যার যার নামে লিখে দিয়ে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে।
শুধু তাদের থাকতে আছে পুরাতন বসত ঘরটি। যে খানে তারা দুজন থাকে আর তিন বেলা দুজনে দুই ছেলের দরজায় হাত পেতে দাড়ায়,আবার খেয়ে নিজ ঘরে ফিরে আসে। ৪/৫ টি নাতি নাতনি থাকতেও দাদা দাদির কাছে আসতে পারে না তাদের মায়েদের কড়া শাসনে।তাই বুড়ো বুড়িকে এই ৪ দেয়ালের ভিতরেই শুয়ে বসে কাটাতে হয়। তারা কি কখনও জানতো যে বয়স হয়ে গেলে তারা সন্তানদের কাছে বাড়তি ঝামেলা হয়ে যাবে,তাদের খাওয়া ভরনপোষণ নিয়া ছেলে, বউদের ভিতরে ঝামেলা বাধবে? এখন আবার এক ছেলের কাছে গিয়া একজনকে ৩ মাস থাকতে হবে আর একজনকে বাড়িতে থাকতে হবে। এই ৪৫ বছরের বিবাহিত জিবনে একজন অন্যজনকে ছাড়া ৩ রাতের উপরে আলাদা থাকতে হয়নি,সেখানে একজনকে ছাড়া আরেকজনকে ৬ মাস দুরে থাকতে হবে। মেঝ ছেলের নিতে আসার দিন যতো ঘনিয়ে আসতে লাগলো বুড়ো বুড়ির চোখের পানি যেন সব শেষ হয়ে শুকিয়ে আসতে লাগলো।
কে আগে যাবে ঠিক হয় নি তবে দুজন দুজনকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। নিজের যত্ন নিবে, খেয়ে এসে না শুয়ে একটু হাটাহাটি করে নিবে,রাত জাগবে না,একদম মন খারাপ করবে না,যখন খারাপ লাগবে আমাকে ফোন দিবে। দুজনে গলাধরে হুহু করে কান্নাকাটি করতে লাগলো,দুমুঠো ভাতের জন্য আজ সন্তানদের দ্বারেদ্বারে ঘুরত হবে,বাপ মাকে ভাগ করে করে খাওয়াতে হবে।