জেলখানায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনিন আনেজ। কিন্তু মারা যাননি তিনি। তার অবস্থা স্থিতিশীল। একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে সম্প্রতি তাকে অভিযুক্ত করেন প্রসিকিউটররা। এ কারণে তাকে জেলে পাঠানো হয়। সেখানেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলখানা বিষয়ক পরিচালক হুয়ান কার্লোস লিম্পিয়াস। তিনি বলেছেন, বর্তমানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনিন আনেজ তার পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন।
কারণ, তার মানসিক অবস্থার উন্নতিতে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তার মেয়ে ক্যারোলিনা রিবেরা বলেছেন, দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তার মা মারাত্মক হতাশায় ভুগছেন।
এ কারণে শনিবার নিজের জীবন বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে জেনিন আনেজের আইনজীবী নরমা কুয়েলার বলেছেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এটা এক বেদনাঘন সাহায্যের আবেদন। তাকে খুব বেশি হয়রান করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনিন আনেজের বয়স ৫৪ বছর। ২০১৯ সালে দীর্ঘদিনের সাবেক আরেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক অভ্যুত্থানে তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এই অভিযোগে তাকে এ বছরের শুরুর দিকে আটক করা হয়। তিনি আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন, তিনি রাজনৈতিক বিচারের শিকার। বিচারের রায় পাওয়ার জন্য জেলেই অপেক্ষায় ছিলেন।
শুক্রবার দেশটির এটর্নি জেনারেল হুয়ান ল্যানচিপা ঘোষণা দিয়েছেন, ২০১৯ সালের নভেম্বরে দু’দফায় গণহত্যা চালানো হয়। সে সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হন। এ দুটি ঘটনায় জেনিন আনেজের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ঘোষণা করেছেন এটর্নি জেনারেল। ওই সংঘর্ষে যারা মারা গিয়েছেন, তারা সবাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেসের সমর্থক। হুয়ান ল্যানচিপা বলেছেন, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনিন আনেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এতে তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, মারাত্মক এবং স্বল্প আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। কোনো কোনো আহত করা থেকে মৃত্যুও ঘটেছে। এ ছাড়া জেনিন আনেজ সন্ত্রাস, রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগের মুখে রয়েছেন।
বলিভিয়ার বিরোধী দল জেনিন আনেজের বিরুদ্ধে সরকারের আচরণের নিন্দা জানিয়েছে এবং তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সাবেক মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেসা তার রাজনৈতিক জেলের ইতি টানার আহ্বান জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছে পরিবার। তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য সমস্যায় ভুগছেন বলে তাদের দাবি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেস পদত্যাগ করার পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসেন রক্ষণশীল জেনিন আনেজ। মোরালেসের অসাংবিধানিকভাবে চতুর্থ দফায় পুনঃনির্বাচনের প্রতিবাদে দেশ যখন সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট মোরালেস। এরপর ওই সময়ের সবচেয়ে সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেনিন আনেজ। কিন্তু তার বিরোধীরা একে অভ্যুত্থান বলে নিন্দা জানাতে থাকেন। জেনিন আনেজের প্রশাসনের অধীনে বলিভিয়ায় শান্তিপূর্ণ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এতে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেসের আশ্রিত লুইস আরচি ভূমিধস বিজয় পান। ফলে তিনি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেন।