প্রতি বছরের ন্যায় ৭১ সনেও যুদ্ধের সময় মিরুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রব ১৫/২০ দিনের জন্য যশোর বোর্ডে টেভুলেশনে ছিলেন। সাথে ছিলেন মঠবাড়িয়ার কে এম লতিফের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মরহুম জনাব সামসুল হক স্যার(যিনি জনাব আবদুর রব এর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তেমনি স্যারেরও বিশ্বস্ত ছাত্র ছিলেন),সাতক্ষিরা নবারুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আফসার সাহেব সহ আরও কয়েকজন। তখন যুদ্ধের চুড়ান্ত পর্যায়। চারদিকে ভয় আতংক নিয়ে সবাইর দিন কাটতো। তারা থাকতেন বোর্ডের গেস্ট রুমে।ভিতরে খাওয়ার ব্যাবস্থা না থাকায় প্রতিদিনকার মতো সেদিনও সকালে তারা সবাই একসাথে বৃস্টিতে ভিজে হেটে সকালের নাস্তা করতে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলেন। সবাইর হাতে ছাতি,রাস্তার ধার দিয়ে হাটতেছেন। তখন শহরের ভিতরে অজানা আশংকায় সব রাস্তা ফাঁকা ফাঁকা,তার উপরে মুষলধারে বৃষ্টি।হঠাৎ বিপরীত দিক দিয়ে একটা আর্মির গাড়ী আসছিলো, সামসুল হক স্যার রাস্তার ভিতরকার সাইডে থাকায় তার ছাতার সাথে গাড়ীর ঘষা লাগে।ঘটনার আকষ্মিকতায় ৩ জনের সবাই ভয়ে ঠান্ডা,কারন এরা তাদের ইচ্ছেমতো মানুষ ধরে নিয়েযেতো। ভয়তে এরা আর পিছনে না তাকিয়ে সবাই দ্রুত সামনের দিকে হাটতেছে আর দোয়া দুরুদ পড়ছে,এই বুঝি না গাড়ী থামায় এবং তাদের তুলে নিয়ে না যায়। যা হবার তাই,পিছনে ব্রেক কষার শব্দ, পিছন ফিরে দেখে কিছু দুর যেতে না যেতেই গাড়ি কড়া ব্রেক করে দাড়িয়ে গেলো। এরা সবাই আড়চোঁখে পিছনে তাকিয়ে দেখে গাড়ী থামানোর সাথে সাথে ৩/৪ জন নেমে হনহনিয়ে তাদের দিকে হেটে আসছে, এ দেখে সবাই আরও ভয়ে জোড়ে হাটতে লাগলো,আর দোয়া দুরূদ পড়তে লাগলো। কিন্ত আর্মির হাটার সাথে তারা পারবে কেমন করে? কয়েকজন আর্মি হেটে একেবারে মোহাম্মদ আবদুর রব সাহেবের সামনে এসে দাড়ালো, তখন তাদের মনের অবস্থা কেমন তা সবাই বুঝতে পারছেন?আর্মিদের ভিতরের একজন যিনি সবাইর সামনে ছিলেন তিনি সবাইকে আম্চর্য করে দিয়ে মোহাম্মদ আব্দুর রব সাহেবের পায়ে হাত দিয়ে ছালাম করে বললেন “আমাকে চিনতে পারছেন স্যার”? সবাইর চোখ ছানাবড়া। উনি চিনতে পারে নাই তবে মনে কিছুটা হলেও সাহস আসছে বিধায় বললো ঠিক মনে করতে পারছি না। তাকে চিনতে না পারায় সে নিজেই বললো আমি অমুক, আপনার ছাত্র, বামনাতে বাড়ী। তখন উনি চিনতে পারলেন। আব্দুর রব সাহেব অন্য সবাইর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি সবাইর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন।মোহম্মদ আব্দুর রব সাহেব বামনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক সময় সহকারি প্রধান শিক্ষক ছিলেন,তিনি তখনকার ঐ স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এখন এদের সবাইকে তাদের ব্যারাকে নেওয়ার জন্য বহু চেস্টা করছিলেন, কিন্তু টেভুলেশন এর সময় বাহিরে যাওয়ায় বিধিনিষে থাকায় অন্য সময় যাবেন বলে তার ছাত্রকে সে সময়ের মতো বিদায় করলেন।তারা বিদায় হতে যেন তারা নতুন করে প্রান ফিরে পেলেন। তারপর আর মনে নেই তারা নাস্তা করছিলেন কিনা? সেই মোহাম্মদ আব্দুর রব আর কেউ নন,আমার আব্বা।