অবশেষে আত্মসমর্পণ করেছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে
তালেবানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন তিনি। ২০ বছর পর আফগানিস্তানের ক্ষমতা চলে যাচ্ছে তালেবানের কাছে। অনেকটাই নিশ্চিত যে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গণি বারাদার। তবে এর আগে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে কথা চলছে। শোনা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হচ্ছে দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আহমদ জিলালি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনায় যুক্ত এই আফগান রাজনীতিককেই অন্তর্র্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে তালেবান জিলালিকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নেবে কিনা তা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যদিও আশরাফ গণির সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর জিলালিকেই ‘সম্ভাব্য গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তি হিসাবে মনে করছে। তালেবান আন্দোলনের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তানের কান্দাহার। এই প্রদেশেই জন্ম নেন আবদুল গণি বারাদার। অন্য আফগানদের মতো বারাদারের জীবনও আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে যায়। সোভিয়েত বাহিনীকে থামাতে তিনি মিলিশিয়া সদস্যে পরিণত হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, মোল্লাহ ওমরের সঙ্গে পাশাপাশি যুদ্ধ করেছিলেন বারাদার। ২০১০ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয় এবং কাতারে চলে যান। সেখানেই তিনি তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ফলে তিনিই তালেবান শাসনের প্রধান নির্বাচিত হবেন- এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, কাবুল যেন শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে, সেজন্য আফগান সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। ‘শান্তিপূর্ণ ও সন্তোষজনক’ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত তাদের যোদ্ধারা কাবুলের সব প্রবেশপথে পাহারায় থাকবে। আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল সাত্তার মিরজাকওয়াল স্থানীয় টোলো টিভিতে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, একটি অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তালেবান কাবুলে হামলা করবে না। তবে তিনিও অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
এর আগে গতকাল কাবুল ঘিরে ফেলে তালেবানরা। এরপরেই তাদের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে যায়। তালেবান কাবুলের বাসিন্দা ও বিদেশিদের আশ্বস্ত করেছে জোর করে তারা ক্ষমতা দখল করবে না। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই চাইছে তারা। তবে তা কীভাবে হবে সেটি জানানো হয়নি। তালেবানের প্রথম সারির নেতারা এখনো কাতারেই অবস্থান করছেন। সেখান থেকেও নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তালেবান আশ্বাস দিলেও কাবুলবাসী তা বিশ্বাস করছে না। রাজধানীতে গতকাল রোববার সকাল থেকেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন তারা। যারা পারছেন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কাবুল বিমানবন্দরের কাছে দীর্ঘ মানুষের সারি দেখা গেছে। তবে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্ররা তালেবানের শাসনেই আটকা পড়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কাবুলের পতন নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।