চলমান কঠোর বিধিনিষেধে পণ্য সরবরাহের অজুহাতে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। এরমধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চালের দাম। তবে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আড়াইগুণ বেড়ে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে বাড়তি দামে অপরিবর্তিত রয়েছে সবজিসহ অন্য পণ্যের দাম। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। ক্রেতারা বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ৩০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ কিনেছি, এখন সেই কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকার উপরে।
বাধ্য হয়ে প্রয়োজনের চেয়ে কম কিনতে হচ্ছে। আর বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরায় ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনতে লাগছে ৫০ টাকা। সে হিসাবে কেজি প্রতি দাম পড়ছে ২০০ টাকা, কোথাও কোথাও ২২০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি ছিল কাঁচামরিচ। তার আগের সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণের মতো। তবে এক সপ্তাহের মাথায় কেনো হঠাৎ করে এতটা দাম বেড়েছে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেননি বিক্রেতারা।
কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মতিন বলেন, বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের মরিচগাছ পানিতে পচে গেছে। মরিচের দাম বাড়ার এটাই একমাত্র কারণ। বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গাজরের কেজি শত টাকা। তবে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মোটামুটি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি (গোল) বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান টমেটো ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা। চাল কুমড়া পিস ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকার ভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, লতি ৮০ টাকা ও কাকরোল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, আদার দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।
সবজি ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, কোরবানির ঈদের পর সবজির চাহিদা খুব কম ছিল। কয়েকদিন ধরে সবজির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়লেও সবজির দাম নতুন করে বাড়েনি। সব ধরনের সবজি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। গত সপ্তাহে মোটা চলের কেজি ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৭০ টাকা, পোলাওয়ের চাল আগের দামেই ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে এবারের মৌসুমে চালের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেট।
চাল বিক্রেতা হোসেন জানান, মোটা ও স্বর্ণাসহ সব চালের দামই এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকাররা বস্তাপ্রতি দাম বাড়ানোর ফলে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। তবে দু-একজন পাইকারের দাবি, সামনে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।
মুরগির দাম বেড়ে বাজারে প্রতি কেজি সোনালি (কক) মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। লেয়ার মুরগি কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। এর সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস আগের মতোই ৫৮০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯৫০ টাকা।
মাছ বাজারে রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা। মৃগেলের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। পাবদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা। পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়।
মাছের বাজারে মোটামুটি সহনীয় থাকলেও ইলিশের দাম সাধারণের বাইরে। এক কেজির ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, ইলিশের সরবরাহ না থাকায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই থেকে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত ইলিশের দাম বেড়েছে।