সিলেটে এম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রোগীরা। সিট খালি নেই জানিয়ে বিদায় করে দেয়া হচ্ছে স্বজনদের। বিশেষ করে ‘শঙ্কায়’ থাকা রোগীদের বেলায় এমনটি ঘটছে বেশি। যাদের অক্সিজেন সাপোর্ট বেশি প্রয়োজন তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই দরোজা বন্ধ। এতে করে অসহায় হয়ে পড়েছেন সিলেটের করোনা আক্রান্ত রোগীরা। জীবন বাঁচাতে স্বজনরা এম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন। পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এরপরও পিছু হটছেন না।
গতকাল দিনের বেলায় হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে কোনো সিট খালি পাননি কয়েকজন স্বজন। ওসমানীনগরের সিরাজুল ইসলাম। বয়স ৩০ বছর। করোনা পজেটিভ হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন। সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতাল সহ কয়েকটি হাসপাতালের দরোজায় রোগী নিয়ে স্বজনরা ধরনা দিলেন। নানা তদবির করলেন। কিন্তু কোথাও মিলেনি একটি অক্সিজেন সংবলিত বেড। শামসুদ্দিনের সামনে এম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আরও কয়েকজন স্বজন। তারা অভিযোগ করলেন- শামসুদ্দিনে যাদের কম অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন, কেবল তাদেরকেই ভর্তি করা হচ্ছে। আশঙ্কাজনক রোগীদের হাসপাতালের দরোজা থেকে বিদায় করে দেয়া হচ্ছে। এতে বাড়ছে আর্তনাদও। হাসপাতালের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। রোগীকে বাড়ি নিয়েও যেতে পারছেন না। রোগীরা চিকিৎসার জায়গা না পেয়ে আরও শঙ্কিত হচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতালেও একই অবস্থা। সিলিন্ডার দিয়ে তারা রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা মতো অক্সিজেন পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দরোজা থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগীদের। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন, সংকট রেখেই অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে আগের মতোই। চাহিদা মতো অক্সিজেন পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো যায়নি। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে স্বাচ্ছন্দ্যে রোগীদের সেবা দেয়া সম্ভব হতো। এদিকে- চিকিৎসার সংকুচিত অবস্থার কারণে সিলেটে মৃত্যুর মিছিল চলছে। গত এক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ১০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৩৫ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আড়াইশ’ জনের কাছাকাছি। ফলে মৃত্যুর মিছিল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। একই সময়ে শনাক্তও প্রায় ১৫ হাজার। রোগী বাড়ার কারণে নানা চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারিভাবে আরও সাড়ে ৪শ’ বেডের আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হয়নি এখনো। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- বুধবার সিলেটে একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। এদিন সিলেটে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন রোগী। এর মধ্যে সিলেটেরই মারা গেছেন ১৬ জন। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭ জন। গতকাল সকাল পর্যন্ত সিলেটে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলারই ১২ জন রোগী। বাকি একজন হবিগঞ্জের বাসিন্দা। দিনে দিনে সিলেটে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৭৬১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ৬০৯ জন, সুনামগঞ্জে ৫৫ জন, হবিগঞ্জে ৩৬ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৬১ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে গেল ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত হন ৭৩১ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্ত শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়া ৭৩১ জনের মধ্যে ৪৪৫ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে সুনামগঞ্জের ৬০ জন, হবিগঞ্জের ১৩৫ জন এবং মৌলভীবাজার জেলার ৯১ জন।