রাজনৈতিক সরকারে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে পাবলিক সার্ভেন্টদের দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে গরিব মানুষকে কি দুর্বিষহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এবার ঈদের পর গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরার দৃশ্যে দেশবাসী আবার তা দেখেছে। গার্মেন্ট মালিকদের চাপে কারখানা খোলার এ আকস্মিক সিদ্ধান্তে মানুষ হেঁটে মাইলের পর মাইল ক্লান্ত-শ্রান্ত মুখে ঘাম ঝরিয়ে কর্মস্থলে রওনা দিয়েছে। এসি রুমে বসে সেই ঘর্মাক্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা পোশাক রপ্তানিকারকদের আয়ের জোগানদাতাদের বেদনা বোঝার কথা নয়। তাহলে গার্মেন্ট মালিকরা যখন ছুটি না দিতে বলেছিলেন তখন তাদের কথা রাখলেই হতো। কিন্তু তখন না রেখে পরে তাদের আবদারে হঠাৎ লকডাউনে কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা শ্রমিকের বাড়তি অর্থই ব্যয় করায়নি, চরম শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। পোশাক কারখানা খোলা থাকবে কি থাকবে না সেসব বৈঠকে মালিকপক্ষের লোকদের রাখা হলেও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাই বলে সাধারণ জ্ঞানে যেখানে গণপরিবহন ও লঞ্চ বন্ধ সেখানে তাদের আনার ব্যবস্থা না করে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সমাজে গরিবের প্রতি কর্তৃত্ববানদের যে নিষ্ঠুর আচরণ তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সড়কে মানুষের মিছিলের স্রোত, ফেরিতে গিজগিজে মানুষের ঢল, এমন দুর্ভোগ অতীতেও গার্মেন্ট মালিকদের কারণে কর্তারা দেখিয়েছেন। অবশ্য পরবর্তীতে সরকার গণপরিবহন চালু করে দিয়েছে শ্রমিকের জন্য। প্রজাতন্ত্রের কর্তারা ভুলে যাচ্ছেন তারা জনগণের সেবক। ক্ষমতার মালিক জনগণ। পোশাক কারখানা খুললে জীবিকার লড়াইয়ে শিল্পকারখানা কেন খুলবে না? শপিং মলের ব্যবসায়ীদের কী অবস্থা? হোটেল-রেস্তোরাঁ? আগস্ট এলে শোকাবহ পরিবেশ মনকে এমনিতেই বেদনাবিধুর করে তোলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ এ দেশের বিশ্বাসঘাতকরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ও নির্মম বর্বরতা নজিরবিহীন। বঙ্গবন্ধু তাঁর আত্মা দিয়ে দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতেন। একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশ তিনি অতিদ্রুত ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। যুদ্ধবিধস্ত দেশ গঠনকে অবজ্ঞা করে উগ্র হঠকারী সরকার উৎখাত, মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওসহ লাল সন্ত্রাসের দানবীয় রাজনীতি তাঁকে সুস্থিরভাবে কাজ করতে দেয়নি। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের নীলনকশাকারী ও ঘাতকদের পথ সহজ করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বারবার সবাইকে সতর্ক করেও বিরত রাখতে পারেননি। নিজ দলের উন্নাসিকদের লাগামও টানতে পারেননি। সরকারি কর্মকর্তাদের বারবার বলেছেন, গরিবের ট্যাক্সের টাকায় বেতন দেওয়া হয়। Bangladesh Pratidinনিজেদের সাহেব ভাবলে চলবে না। জনগণের সেবক ভাবতে হবে। কৃষক, শ্রমিক আর গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য তাঁর অন্তরভরা দরদ ছিল। বারবার তাঁর বক্তব্যে তা উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে তাঁর অর্থনৈতিক মুক্তির রূপরেখা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। রাজনৈতিক শক্তির কর্তৃত্বের ওপর আঘাত এসেছিল। পেশি ও কালো টাকামুক্ত নির্বাচনব্যবস্থা আলোর মুখ দেখেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেদিন বাংলাদেশের আত্মাকে হত্যা করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন কবর দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজও আমরা ফিরে পাইনি। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ ছিল তাঁর স্বপ্ন। গত এক যুগ ধরে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অর্থনীতিতে বিস্ময়কর উত্থান ঘটিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করে উন্নত দুনিয়াকে চমকে দিয়েছে। মেগা প্রকল্প আর উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে মুখর আজকের বাংলাদেশ। এর মধ্যেও একশ্রেণির লুটেরা ব্যাংক লুট করে নিয়ে যায়। ঋণখেলাপি হয়েও আলিশান জীবনযাপন করে। বিদেশে অর্থ পাচার করেও পার পেয়ে যায়। দেশে দেশে সেকেন্ড হোম বা বেগমপাড়া গড়ে তোলে। ওদের ভাগ্য বদল হলেও যাদের রক্ত চুষে নিজেরা দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে, বিলাসী জীবনযাপন করে সেই শ্রমিকের ভাগ্য বদল হয় না। আমাদের বলবান কৃষক কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। দেশপ্রেমিক সৃষ্টিশীল শিল্পপতিরা দেশে বিশাল বিনিয়োগ করে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। ট্যাক্স দিচ্ছেন, ভ্যাট দিচ্ছেন। করোনাকালে তাদের ওপর যে বিপর্যয় তা-ও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। কেবল গার্মেন্ট মালিকদের স্বার্থরক্ষা করে শ্রমিকদের দুর্ভোগে ফেলে অর্থনীতি ও জীবিকা রক্ষা সম্ভব নয়। আমাদের অর্থনীতির আরও বড় শক্তি প্রবাসী শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্স। অর্থনীতির শক্তিগুলোকে গরিব আর সাধারণ মানুষ মনে করে সরকারি কর্মকর্তাদের তাদের সঙ্গে যা খুশি আচরণ করার দিন ফুরিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু মুনাফাখোর কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। বিদেশের এজেন্টদের বিরুদ্ধে বারবার সতর্ক করেছেন। এমন মহান দেশপ্রেমিক বিশ্বনন্দিত জাতীয়তাবাদী নেতা আর কখনো আসবেন না। কিন্তু তাঁর আদর্শ ও পথ অন্তরে চিন্তায় মননে ও কর্মে সততার সঙ্গে লালনপালন করলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।
করোনার ভয়ংকর অভিশাপ থেকে আমরা কবে মুক্ত হব জানি না। করোনার বিরুদ্ধে পৃথিবীজুড়ে লড়াই চলছে। দেড় বছর ধরে কয়েক দফা করোনার ঢেউয়ে আমাদের জীবন কার্যত প্রাণহীন, বিষাদগ্রস্ত। আমাদের পারিবারিক বন্ধন দেখা-সাক্ষাৎ শিথিল হয়ে গেছে। সামাজিকতা সৌহার্দ্যরে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত মানুষের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে দেখতে মানুষের মন মরে যাচ্ছে। শোকস্তব্ধ মানুষ ইন্নালিল্লাহ পড়তে পড়তে সময় পার করছে। একই পরিবারে হয় কেউ হাসপাতালে, নয় বাড়িতে চিকিৎসাধীন। কখনো একাধিক সদস্যের মৃত্যুসংবাদ শোকে মুহ্যমান করে দিচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে যে লড়াই চলছে সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও নিরন্তর যুদ্ধ চলছে। অদৃশ্য শক্তি করোনার হাত থেকে মানুষ বাঁচানোর লড়াই, মানুষের জীবিকা রক্ষার লড়াই, দেশের অর্থনীতি বাঁচানোর লড়াই। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। তবু দেশের চিকিৎসকসমাজ, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অবিরাম ক্লান্তিহীন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা টিকার নিশ্চয়তা দিয়ে গণটিকা কর্মসূচিতে যাচ্ছেন। দেশের মন্ত্রী-এমপিরাও যার যার এলাকায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে আছেন। মানুষের জন্য মানুষ পাশে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত অসহায় মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের সঙ্গে দেশজুড়ে থাকা সচ্ছল মানুষদেরও আরও এগিয়ে আসা উচিত। টিকা গ্রহণে এবার মানুষের মধ্যে সাড়া দেখা যাচ্ছে। গণটিকা গ্রহণে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রান্তিক মানুষকে উৎসাহিত করতে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক-সামাজিক সব শক্তিকেই ভূমিকা রাখতে হবে। করোনার এ বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে।
আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল এ দেশে আর নেই। উপমহাদেশে এটি অন্যতম একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল। প্রথম দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উত্থান ও শক্তিশালী গণমুখী সংগঠন হিসেবে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। দ্বিতীয় দফা মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার ৪০ বছরের নেতৃত্বে দলটি আজকে দেশে টানা ১২ বছর ক্ষমতায়ই নয়, দেশের সর্ববৃহৎ তৃণমূল বিস্তৃত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এ রাজনৈতিক দলের জন্য হাজার হাজার নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর শরীরের রক্ত ঝরেছে। ঘাম শ্রম মেধায় নেতৃত্বে সাংগঠনিক দক্ষতায় পরিপূর্ণতা পেয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। অন্তহীন দহনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটলেও দল ছেড়ে যাননি। বুকভরা অভিমান নিয়ে ঘরে বসেছেন তবু দলের অকল্যাণ চাননি। আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য যখন বিরোধী দলে থাকে তখন দলের পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরা একটি একান্নবর্তী পরিবারের মতো বাস করেন। লড়াই-সংগ্রাম করে জেল জুলুম নির্যাতন ভোগ করেন। কিন্তু ক্ষমতায় এলেই দুঃসময়ের কর্মীরা অবহেলার শিকার হন। পরিবেশ কাউকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। কেউ কেউ অভিমানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আর হঠাৎ করে একাংশ ক্ষমতা লাভের মধু খেতে খেতে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে অর্থবিত্ত কামাতে দলটিতে এসে ভিড় করেন। এ আমদানি অংশটিকে একসময় বসন্তের কোকিল বলা হতো। এখন হাইব্রিড আগাছা পরগাছা বলা হয়। বহুদিন থেকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বললেও তা করা হয়নি। দলের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে অসংখ্য ভুঁইফোড় সংগঠন একেকজন গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে তারা নিজেদের গায়ে মুজিবকোট পরে বড় মুজিবভক্ত হয়ে যায়। এরা তদবিরবাণিজ্য নিয়োগবাণিজ্য আর চাঁদাবাজির রমরমা হাট বসায়। সর্বত্র এদের দৌড়ঝাঁপ। সারা দেশে শাখা সংগঠন খুলে কমিটিবাণিজ্য করে। দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপরাধে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে বহিষ্কার করার পর র্যাব তাকে আটক করেছে। তার চাঁদাবাজির অনেক অডিও রেকর্ড এখন একের পর এক বের হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ নামে দোকান খোলা দর্জি মনিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগেই বলেছিলেন দলের ইমেজ নষ্ট করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, আড়াই শ সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। দলের নাম ভাঙানো বাজিকর এ প্রতারকদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানাতে হয়। এতে যারা এদের প্রশ্রয় দিয়েছেন তারাও সতর্ক হবেন। দলে যারা অপকর্ম করেন তাদের বিষয়েও হাইকমান্ডকে সজাগ-সতর্ক হতে হবে।
কি দুঃসাহস থাকলে এমন প্রতারণা করে যায় মানুষ! ঈশিতা নামের এক রমণী দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে একজন নামকরা চিকিৎসক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলে জালিয়াতি কাগজপত্র দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাকেও র্যাব আটক করেছে। একটি সহজ সরল সৎ সুন্দর সমাজব্যবস্থা দিনে দিনে কতটা ভঙ্গুর হলে চারদিকে এমন প্রতারকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সমাজে এখন মানুষ চেনা বড় দায়। সকালে যাকে চেনা যায় বিকালে তাকে চেনা যায় না। রাতে যাকে বিশ্বাস করা যায় সকালেই সে হয়ে ওঠে ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতক। একটা অস্থির অশান্ত মূল্যবোধহীন নীতিহীন আদর্শহীন অসুস্থ রাজনীতি ও সামাজের মধ্যে আমরা বাস করছি। একসময় ক্ষুধার জ্বালায় নির্দিষ্ট রেডজোনে দেহব্যবসায় যেত যারা তাদের সমাজ বেশ্যা বলে ডাকত। কিন্তু আজকের সমাজে মুখোশ পরে কি নায়িকা, কি মডেল কি প্রান্তিক থেকে আসা তরুণী বা একদল নারী সমাজে হেঁটে বেড়ায়। তাদের চরিত্র চেনা যায় না। এর মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ মডেল পিয়াসা ও মৌকে গ্রেফতার করেছে। বাড়িতে তাদের মদের বার। এর আগে চিত্রনায়িকা পরীমণির বাড়িতেও মদের বার দেখা গেছে। এদের বিলাসী জীবনের ব্যয়বহুল অর্থের উৎস যে অনৈতিক পথে আসে তা এখন দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত। হাই সোসাইটি থেকে নানা সোসাইটিতে বিচরণ করা এ উচ্চাভিলাষী চরিত্রহীনেরা উঁচুদরের কলগার্লই নয়, নারী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে ভয়ংকরভাবে জড়িত। কেউ কেউ কারও রক্ষিতা। এর আগে চিত্রনায়িকা একা গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। তরুণসমাজকে এরা মাদকের জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এসব রাতদিনের চরিত্রহীন রানীরা পুরুষ শিকার করে প্রলোভনে। তারপর স্বার্থ হাসিলের কুৎসিত কদর্যরূপ নেয়। বিত্তবানদের সঙ্গে মিশে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছে। ক্ষমতাবানদের আসরে নিয়ে সুবিধা আদায় করে। সমাজের আলোকিত মানুষদের সঙ্গে মিশে নিজের চরিত্র আড়াল করে। একসময় বাসে চড়া এ তরুণী বা নারীরা এখন বিলাসবহুল চড়া মূল্যের গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ায় ঢাকা শহরে। এদের মেকআপহীন আটকের চেহারা দেখে রড-সিমেন্ট খসে পড়া পরিত্যক্ত ভবনের দেয়ালের কথা মনে করিয়ে দেয়। হাতে গোনা দু-তিন জন ধরা পড়েছেন। এক অন্ধকার জগতের একটি বিন্দু দেখা গেছে মাত্র। আসলে সমাজে নানারূপ এ চরিত্রহীনের সংখ্যা অ-নে-ক। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সমাজকে কলুষিত করা মানুষকে ব্ল্যাকমেল করা উঠতি বয়সী তরুণদের মাদকের সাম্রাজ্যে টেনে নেওয়া এসব হাই সোসাইটির নারী অপরাধীর সংখ্যা কত? সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকা একদল নারীও সমাজে বিচরণ করেন, তারা কথায় আচরণে বড়ই সুন্দর। অনেকে উচ্চশিক্ষিতও। মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশও ভেঙে গেছে। এ অংশ থেকে উঠে আসা তরুণী বা নারীদের একাংশও মূল্যবোধ, রক্ষণশীলতা, লজ্জা নির্বাসনে দিয়ে লোভের পথে হাঁটে। কিন্তু ভিতরের চেহারা ও চরিত্র প্রতারণা-বিশ্বাসঘাতকতায় ভরা। সমাজ থেকে নানামুখী তৎপরতায় সুবিধা ভোগ করে। সরকার এদের বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করছে তা অব্যাহত থাকুক। এ নষ্ট সমাজকে কিছুটা হলেও বিশুদ্ধ করার সময় এসেছে। ঢাকার বাতাসে বিষ। চারদিকে দূষিত বাতাস আরেকদিকে করোনার ছোবল। এমন সময় এসব নষ্ট নারীর দ্বারা গোটা সমাজ কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। এদের বিচরণ সর্বত্র। কখন কার সঙ্গে পরিচিত হয়, ছবি তুলে মাঝখানে তাদেরও বিতর্কে ফেলে। সমাজকে দূষণমুক্ত করতে এ বিষের ফেরিওয়ালিদের প্রতিটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। একালের নারীবাদীদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল কথা লিখলেই মনে করেন নারী প্রগতির বিপ্লব ঘটিয়েছেন। নারীর স্বাধীনতা ভোগ করছেন। এ দেশে কবি সুফিয়া কামাল থেকে সর্বশেষ আয়শা খানম পর্যন্ত নারীজাগরণ বা প্রগতিশীল নারী আন্দোলনের প্রতিটি মুখ মনে পড়লে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার, নিরাপত্তা ও সম্পত্তিতে বৈষম্যমূলক আইনের অবসান চাইতে হয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। নারীর মেধা, শ্রম, ব্যক্তিত্ব, রুচি, আভিজাত্য ও সততা নিয়ে এ লড়াই করতে হয়। মূল্যবোধ নির্বাসন দিয়ে নয়।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।