চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা এক নারীর দেহে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। ষাটোর্ধ্ব ওই নারী এখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ওই নারী চার দিন আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। তবে বিষয়টি বুধবার প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ওই নারী রোগীর স্বজনরা জানান, চলতি বছরের ২৫ জুন তার জ্বর আসে। ৩ জুলাই নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর ১৫ জুলাই পরীক্ষায় তিনি কোভিড নেগেটিভ হন। তবে তার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ২৪ জুলাই তাকে ফের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত এপ্রিল ও মে মাসে ভারতে করোনার ডেলটা ধরনের প্রকোপের মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কোভিড থেকে সেরে ওঠা বা সেরে ওঠার পর্যায়ে রয়েছেন, এমন রোগীদের এই ছত্রাকে সংক্রমণ হয়। রোগী বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকেও মহামারী ঘোষণা করা হয়।
তখন ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছিলেন, সাধারণত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও এইডসের মতো রোগে আক্রান্তদের শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে থাকে। আগে থেকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এসব ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো দুর্বল হয়ে পড়েন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা সহজেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়ে থাকেন।
চট্টগ্রামের এই নারীও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন বলে তার মেয়ে জানিয়েছেন। মায়ের বিষয়ে মেয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তার দাঁতব্যথা হয়। এরপর মুখ ফুলে যাচ্ছিল। পরে চোখ ও চোখের আশপাশের জায়গায় লালচে কালো হয়ে যাচ্ছিল। তখন একজন চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয় তাকে। ওই চিকিৎসক রোগীর সিটি স্ক্যান করতে দেন। ওই রিপোর্ট আসার পর তিনি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করেন চিকিৎসকরা। এরপর ২৪ জুলাই তাকে চট্টগ্রামে মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।
রোগীর মেয়ে বলেন, চমেক হাসপাতালে ভর্তির পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মায়ের বায়োপসি করতে দেয়া হয়। বুধবার দুপুরে আসা রিপোর্টে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে। আরো অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুযত পাল বলেন, ‘এখনই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলা যাবে না। আমরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাসপেকটেড হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি।’
তবে ওই নারীর ছেলে বলেন, মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার আগের দিন ২৩ জুলাই বাবা করোনায় মারা গেছেন। এখন ওষুধের অভাবে মাকে বাঁচানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, চিকিৎসকরা যে ওষুধ লিখেছেন, তা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।