কঠোর লকডাউনে ঢাকা-চিটাগাং রোডে যানবাহন না থাকায় এভাবে গাদাগাদি করে ছুটছে মানুষ: ছবি-শাহীন কাওসার
মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত লকডাউনে ঢাকার সড়ক অনেকটা ফাঁকা। সড়কে যান ও জন চলাচল কমেছে। সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট। অনেক স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড ও কাঁটাতারের বেড়া বসিয়েছে। সড়কে ছিল সেনাবাহিনীর টহল। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে চালককে লকডাউনের মধ্যে কেন বের হয়েছেন তা জিজ্ঞাসা করতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধ না মানায় অনেকের নামে ঠুকে দেয়া হয়েছে মামলা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা হ্যান্ড মাইকে সবাইকে বাসার বাইরে না বের হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়া কিছু রিকশা-ভ্যান চলেছে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে। যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন তারা পড়েছেন পুলিশের জেরার মুখে। প্রায় সব শ্রেণির মানুষকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে যারা ব্যক্তিগত কাজে বের হয়েছেন তাদের অনেকেই মাস্ক ছাড়া বের হয়েছেন। গতকাল অফিস-আদালত, গণপরিবহন ও শপিংমল বন্ধ ছিল। তবে মূল সড়কে মানুষের দেখা কম মিললেও সড়কের পাশের অলিগলিতে লোকজনের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।
এ ছাড়াও ঢাকার একাধিক হোটেলে লোকজনকে একসঙ্গে বসে খেতে দেখা গেছে। সড়কে গাড়ি কম চললেও যে যার মতো ব্যক্তিগত কাজে পায়ে হেঁটে গন্তব্য স্থানে গেছেন। ঢাকার সড়ক ছিল রিকশার দখলে। ঢাকার বড় তিন টার্মিনাল মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়াও বাইরে থেকে আসা কোনো যানবাহনকে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে কঠোর নজরদারি বসায় পুলিশ। শুধুমাত্র সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহনগুলো ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। তবে যারা বিভিন্ন জরুরি কাজে ঢাকায় এসেছেন তারা ঢাকার প্রবেশ পথে গাড়ি থেকে নেমে রিকশা ও ভ্যানে করে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে।
তবে গতকালও যে যার মতো পেরেছেন ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। আমিন বাজার ব্রিজ দিয়ে অনেকেই ব্যাগ ও কাঁধে শিশু সন্তানসহ ঢাকায় প্রবেশ করেছেন।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বিধি লঙ্ঘন করে বাসার বাইরে আসায় ৫৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৬৪ জনকে ১২ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আর সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হওয়ার কারণে ৪৪৩টি গাড়িকে ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ই আগস্ট পর্যন্ত চলবে লকডাউন। তবে এর মেয়াদ বাড়বে না কমবে তা এখনো পর্যন্ত বলা হয়নি।
গতকাল সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী, ফার্মগেট, সেগুনবাগিচা, পল্টন, শাহবাগ ও কাকরাইল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে যে, প্রত্যেক এলাকায় শক্ত লকডাউন পালিত হয়েছে। সড়কের মোড়ে মোড়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল টিম। ঢাকার বড় শপিংমলগুলো বন্ধ ছিল। তবে মূল সড়কের বাইরের ছোট দোকানগুলো ছিল খোলা। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউনে হোটেল-রেস্তরাঁ খোলার কথা বলা হলেও সেখানে নিষেধ ছিল যে, হোটেল ও রেস্তরাঁয় কেউ বসে খেতে পারবে না। কিন্তু, অনেক হোটেল ও রেস্তরাঁয়ও বসে খেতে দেখা গেছে।
শাহবাগে রিকশাচালক স্বপন হোসেন জানান, সকালে রিকশা নিয়ে সড়কে নেমেছি। মূল সড়কে পুলিশ অন্যদিনগুলোতে বাধা দিয়ে থাকে। তবে লকডাউনের প্রথমদিন পুলিশ তাদের কোনো বাধা দেয়নি। সকালে যাত্রীর চাহিদা বেশি ছিল। বেশি ভাড়া হাঁকা হয়েছে। তিনি ভাড়াও পেয়েছেন বলে জানান। ট্রাফিক পুলিশ সবুজ হোসেন জানান, লকডাউনে যানবাহনের চাপ নেই। তবে প্রাইভেট গাড়িগুলো থামিয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে তাদের পরিচয় ও লকডাউনে কেন তারা বের হয়েছেন।
গতকাল শাহবাগ মোড়ে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ একটি সাদা প্রাইভেটকার থামিয়েছেন। পরে ভেতরে দেখা যায় এক সাদা পোশাকধারী নারী বসে আছেন। গতকাল সকালেও ঢাকায় বসবাসরত লোকজন গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। তারা ঈদ করতে গ্রামে গেছেন। তবে অধিকাংশই হচ্ছেন ঢাকার আশেপাশের জেলায়। অনেকের অফিস লকডাউনে বন্ধ থাকার কারণে তারা দেরিতে ঢাকায় ফিরেছেন বলে জানা গেছে। তবে আমিন বাজার সেতুর ওপারে পুলিশের শক্ত প্রহরা ছিল। কিছু ট্রাক ও যানবাহনকে তারা আবার উল্টো পথে ঘুরিয়ে দেন।