মাওয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি:ঈদ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই মানুষ যেমন গ্রামে ফিরেছিলেন, ঈদের পরদিনই তেমনিভাবে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে তাদের। আগামীকাল শুক্রবার থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) কারণে ঈদের খুশি স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে না করতেই কর্মস্থলে ফিরছেন তারা। এদিকে আবারও কঠোর লকডাউনের কারণে অনেকে আবার গ্রামেও ফিরে যাচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শিমুলিয়া বাংলাবাজার নৌরুট দিয়ে শুরু হয়েছে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘাট এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধির উপেক্ষা করেই কর্মস্থলে ফিরছেন হাজারো মানুষ।
কর্মস্থলমুখী এসব মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দের ছাপ থাকলেও তাদের মধ্যে স্বজনদের ফেলে আসার বেদনাও রয়েছে। অল্প সময়ের ছুটি ও কঠোর লকডাউনের কারণে প্রিয়জনদের ছেড়ে আবারও ব্যস্ত নগরীতে ফিরছেন তারা।
শিমুলিয়া বাংলাবাজার নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ ও ১৮ ফেরি চালু রাখা হয়েছে। শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন অফিসার আহম্মেদ আলী বলেন, ‘ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের যত চাপই হোক বিআইডব্লিউটিসি প্রস্তত রয়েছে। সবগুলো ফেরি সার্ভিসে নিয়োজিত আছে। ঈদে সেবা দেওয়ার জন্য কাউকে ছুটি দেওয়া হয়নি। আমরা সর্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছি।’
ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে কর্মস্থলে ফিরছেন মো. জাকির। তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে আবার ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। অনেকদিন পর বাড়ি গিয়ে ঈদের পরদিনেই ফিরে আসা কষ্টদায়ক। বাড়িতে যেতে না যেতেই ফেরার সময় হয়ে যায়। তাই ঈদের আনন্দ থাকলেও কিছুটা খারাপও লাগছে।’
মো. মাসুদ নামের একজন ঢাকাতেই ঈদ করেছেন। তবে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধের সময় গ্রামে কাটাবেন বলে বৃহস্পতিবার ভোরেই রওনা হয়েছেন খুলনার উদ্দেশে। তবে তিনি দুই সপ্তাহ পর ফিরতে পারবেন কিনা সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে তার মনে।
সারা দেশে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও সাত দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে বিধিনিষেধেও বিশেষ ব্যবস্থায় রপ্তানিমুখী পোশাক ও শিল্প কারখানা খোলা ছিল। এরপর ঈদুল আজহার কারণে ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়।
গত ১৩ জুলাই জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে লকডাউন শিথিলের এ নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সময়ে জনসাধারণকে সতর্ক থাকা, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
একই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসজনিত সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের ছুটি শেষে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।