সৌদি আরবের মক্কার ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে মসজিদে নামিরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পবিত্র হজ। সোমবার ৬০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জোহর ও আসরের নামাজ এক আজানে ইকামতে আদায় করেন। আজকের এ দিনটিকে বলা হয় আরাফাত দিবস।
পবিত্র অনুভব আর ঐশী আবেগে উদ্ভাসিত হাজারো মুসল্লির উপস্থিতিতে আরাফাত ময়দান ছিল কাণায় কাণায় পূর্ণ। ইসলামের ইতিহাসে হজ পালনে শুভ্র বসনে অভিন্ন অবস্থানে অগণিত নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ানিন মাতা লাওয়াকুলমুলক লা শারিকালাক।’
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে সালাম দিয়ে হজের খুতবা শুরু করেন দেশটির বিশিষ্ট আলেম, সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য, মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ও শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। খুতবার শুরুতে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেন ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের ওপর দুরুদ পড়েন। এবারের হজে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা চেয়ে দোয়া করেন তিনি।
হজের খুতবায় শায়খ বালিলা মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ করে বলেন, উম্মতে মুসলিমদের উচিত পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব বজায় রাখা। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিজের নফসকে হেফাজত করো। আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করো।
২৫ মিনিট ব্যাপী খুতবার শেষাংশে সৌদি সরকারের জন্য দোয়া করেন ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। সেইসঙ্গে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করেন। করোনাকে মহামারি উল্লেখ করে এর থেকে বিশ্ববাসীর হেফাজতের জন্য দোয়া করেন। সর্বাবস্থায় আল্লাহর দরবারে যাবতীয় সমস্যার জন্য বেশি বেশি দোয়া করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
খুতবা শেষে জোহরের নামাজের আজান দেওয়া হয়। এরপর খতিব উপস্থিত হাজিদের নিয়ে দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন।
গত বছরের মতো এ বছরও পবিত্র হজের আরবি খুতবা অন্যান্য খুতবার পাশাপাশি দ্বিতীয় বারের মতো বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হয়েছে। বাংলা ভাষা ছাড়াও বাকি নয়টি ভাষা হলো ইংরেজি, মালয়, উর্দু, ফার্সি, ফ্রেঞ্চ, মান্দারিন, তুর্কি, রুশ ও হাবসি। ২০১৯ সালের পবিত্র হজে পাঁচ ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ প্রচারিত হয়েছিল।
হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছরের ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়। এই আরাফাতের ময়দানেই হজরত মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
বছর জুড়ে কালো গিলাফ বা কিসওয়ায় আবৃত থাকে পবিত্র কাবা শরিফ। প্রতি বছর হজের দিন ৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর পরই পরানো হয় নতুন গিলাফ।
৯ জিলহজ সোমবার ফজরের নামাজের পর হজযাত্রীরা আরাফাত ময়দানে চলে গেলে গিলাফ পরিবর্তনের কথা থাকলেও রীতি ভেঙে রোববার রাতে পুরোনো গিলাফ বদলে নতুন গিলাফ চড়ানোর কাজ শুরু হয়। হারামাইন শরাফাইনের সভাপতির তত্ত্বাবধানে গিলাফ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শেষে করেন এ কাজে নিয়োজিত বিশেষ কর্মীরা। এদিকে গিলাফ পরিবর্তনের কাজে অংশ নিয়েছে সৌদির প্রভাবশালী অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান।
এর আগে কাবার নতুন গিলাফ বাদশাহ আবদুল আজিজ কিসওয়া কমপ্লেক্স থেকে অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত একটি বিশেষ ট্রাকে করে সুসজ্জিত বহরের মাধ্যমে মসজিদুল হারামে নিয়ে যাওয়া হয়। কাবা শরিফের নতুন এই গিলাফে ৬৭০ কেজি খাঁটি রেশম, ১২০ কেজি খাঁটি স্বর্ণ এবং ১০০ কেজি রুপার সুতা ব্যবহার করা হয়েছে। স্বর্ণের সুতা দিয়ে গিলাফের বিভিন্ন অংশে কোরআনের আয়াত লেখা হয়েছে।
পুরোনো গিলাফের বিভিন্ন অংশ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের সরকার প্রধানসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের উপহার হিসেবে দেয়া হয়।