খামারে পালনকৃত গরু বেশি লাভের আশায় কৃষক সাদিকুলসহ তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। পথিমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী চেকপোস্টে ট্রাক থামিয়ে জব্দ করা হয় ২২টি গরু। এরপর গরুগুলোকে ভারতীয় বলে গত বৃহস্পতিবার নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস দপ্তর। ফলে গত একবছর ধরে পালনকৃত গরুগুলোকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষক সাদিকুল ইসলামসহ কয়েকজন। গতকাল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষক সাদিকুল। তিনি বলেন, গরুগুলো রেখে আসার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বউ-বাচ্চা সবাই কান্নাকাটি করছে। যারা গরুর ট্রাক আটকায় তখন তারা বলেছিলো- টাকা দিয়ে যান, ট্রাক ছেড়ে দিবো। তখন সাদিকুল তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কিসের টাকা দিবো, আমি মেম্বার মানুষ।
তারপর তারা আমাকে হ্যান্ডকাপ লাগানোর হুমকি দিয়ে গরুগুলো নিয়ে কাস্টমস অফিসের দিকে রওয়ানা দেয়। আমি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বিজিবি’র সিইও সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু করোনার অজুহাত দেখিয়ে বিজিবি’র গেটে আমাকে আটকিয়ে দেয়া হলো। শেষপর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ন্যায় বিচারের আশায় একটি দরখাস্ত দিয়ে এসেছি। এ সময় সাদিকুল বলেন, ‘২১ লাখ টাকার গরু শুনেছি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।’ বার বার মূর্ছা গিয়ে শুধু একটা কথাই বলছেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, গরুগুলো না পেলে মরে যাবো ভাই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে পালন করা এই ২২টি গরু চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজশাহীর গোদাগাড়ী চেকপোস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের যৌথ দল গত বুধবার আটক করে। পরে বৃহস্পতিবার ভারতীয় গরু বলে রাজশাহী শহরে নিয়ে গিয়ে পানির দামে মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। গরুগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা দাবি করেন গরুর মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী মহানগরীর রুবেল বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে গরুগুলো পানির দামে বিক্রি করা হয়। রাজশাহী নগরীর দাশপুকুর এলাকায় সিটি বাইপাশের উত্তর পাশে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের গুদামে গরুগুলো নিলাম করা হয়। এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, গরুগুলো তাদের বাড়িতে পোষা। গরু মালিকদের বাড়ি গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি ও ব্রজনাথপুর গ্রামে। গরু মালিকদের মধ্যে বেগুনবাড়ি গ্রামের মো. রহিমের পাঁচটি, মো. মইদুলের চারটি, মো. সেলিমের আটটি, ব্রজনাথপুরের সাদিকুল ইসলামের আটটি গরু ছিল। গরুগুলো চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে নেয়ার জন্য বাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলাম একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘গরুগুলো বাড়িতে পোষা। এটা ভারতীয় গরু নয়। কিন্তু তারা কীভাবে আটক করে নিলাম দিয়েছে?’
ইউপি সদস্য সাদিকুল ইসলাম দাবি করেন, বুধবার দুপুরে গোমস্তাপুর থেকে গরুগুলো একটি ট্রাকে তুলে চট্টগ্রামে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাট যৌথ চেকপোস্টে ট্রাক থামানো হয়। তখন তিনি ট্রাক থেকে নেমে নিজের পরিচয় দেন এবং জানান এগুলো ভারতীয় গরু নয়। তাদের বাড়ির পোষা গরু। পরিচয় শুনেই কাস্টমসের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সাদিকুল তাদের প্রত্যয়নপত্র দিলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়। এদিকে গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কাস্টমসের পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব বলেন, বিজিবি ও কাস্টমসের সদস্যরা আমাদের গুদামে গরু দেয়ার সময় বলেছেন, কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। ট্রাক থামানো হলে ভারতীয় এসব গরু ফেলে সবাই পালিয়ে গিয়েছে। জব্দ তালিকায় বিজিবি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি গরুর দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা। শাহরিয়ার বলেন, ‘গরুগুলোর দাম এত বেশি বলে আমরা মনে করি না। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার হতে পারে। আমরা নিলামে ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এটা পর্যাপ্ত।’ তবে এ নিয়ে বিজিবি’র রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘গুরুগুলো যে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই ট্রাকে কোনো কাগজপত্র ছিল না। ফলে কাস্টমস এবং বিজিবি’র যৌথ দল গরুগুলো আটক করেছে। পরে কাস্টমস সেগুলো নিলাম করেছে। তারা কীভাবে নিলাম করলো সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে।’