ঢাকাঃ ফেনীতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ও চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে চিন্তিত কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। ঈদের পূর্বে বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি ও পশুর ন্যায্য দাম নিয়ে বিক্রেতাদের মাঝে উৎকন্ঠা ও শংকা বিরাজ করছে। ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন বলে জানান খামার ব্যবসায়ীরা।
ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম’র চৌধুরী এগ্রো ফার্মের মালিক ও পরশুরাম পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল জানান, ‘প্রত্যেক বছর কোরবানীর ৪/৫ মাস পূর্বে আমার খামারে বড়-ছোট মিলিয়ে ৫শ থেকে ৬ শতাধিক গরু প্রস্তুত রাখতাম। গত বছর মার্চ মাস থেকে করোনায় দেশের সব ক’টি গরু বাজার বন্ধ ছিল। এজন্য আমিসহ অন্য খামারিরাও তেমন গরু কিনতে পারিনি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় আমি তিন ভাগের মাত্র এক ভাগ গরু কিনতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর ওজন করে পশু বিক্রি করার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে গত ২০ বছরের চিত্র আর চলতি বছরের চিত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এ বছর কোরবানি পশুর বাজার কোন পরিসরে হবে, আমরা এখনো নির্দেশনা পাইনি’।
সাজেলের মতো আরও এক খামারি আরাফাত খান বলেন, ফেনী শহরের পাঠান বাড়ি এলাকায় হাসিনা অ্যাগ্রো নামের একটি তার খামার রয়েছে।
নবীন এই খামারি আসন্ন ইদুল আজহাকে ঘিরে তার খামারে ২৫টির গরু লালন পালন করেছেন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করেছেন ২৫ লাখ টাকার মত। ঈদের আর বেশি দিন বাকি না থাকলেও চলমান লকডাউনের কারণে পশুর হাটে গরু বিীি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
শুধু পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল কিংবা ফেনীর আরাফাত খান একা নয়, নিজেদের লালিত-পালিত ও ক্রয়কৃত পশু বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এমন আরো অনেক খামারি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ঈদে ব্যবসা কী হবে এটা ভেবে অনেকেই চোখে অন্ধকার দেখছেন খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ফেনীতে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭২ হাজার। অপরদিকে এ জেলায় লালনপালন করা হচ্ছে ৮০ হাজার ৮৬৫টি গবাদিপশু। প্রতিবছর কোরবানি ঈদ এলে শহর-নগর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লার সব জায়গায় বসে পশুরহাট। কিন্তু করোনার এই মহামারিতে পশু ক্রয়-বিক্রয় কীভাবে হবে এ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে খামারি ও ক্রেতা দু’পক্ষের মধ্যেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, ফেনী সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩২২, দাগনভূঁঞায় ৮ হাজার ৮৩০, ছাগলনাইয়ায় ১৮ হাজার ৭২৫, সোনাগাজীতে ১৭ হাজার ৫০৫, ফুলগাজীতে ৫ হাজার ২০৬ এবং পরশুরামে ৮ হাজার ২২৭টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ছোট-বড় খামারির পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানির পশু লালনপালন করছেন। এর সংখ্যাও ২০ হাজারের অধিক।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইন গরু বাজার মোটামুটি জনপ্রিয় হলেও ফেনীতে অনলাইনে তেমন বেচাবিক্রি হয় না। তবে গত বছর থেকে করোনার মধ্যে অনলাইনে গরু বিক্রির জন্য জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনুপ্রাণিত করে আসছেন।
এদিকে খামারিদের শঙ্কা কয়েকগুণ বেড়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি চোরাইপথে ভারতীয় গরু এলে তাদের লোকসান আরও বাড়বে। ফেনীর স্থানীয় খামারিদের অভিযোগ, ফেনীর তিনদিক সীমান্ত থাকায় ভারতীয় সীমান্তপথ দিয়ে প্রতিনিয়ত পশু ঢুকছে। এতে দাম কমে গিয়ে বাংলাদেশের ছোট-বড় গরু খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ভারতীয় গরুর প্রবেশ প্রসঙ্গে খামারি সাজেল চৌধুরী বলেন, পরশুরামের বক্সমাহমুদের খাজুরিয়া ও মির্জানগর সীমান্ত দিয়ে প্রতি রাতে কয়েক শতাধিক গরু প্রবেশ করে। এভাবে যদি গরু ঢোকে, তাহলে দেশি খামারিদের সব কষ্ট, শ্রম ও পুঁজি বৃথা যাবে।
সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড ব্যটালিয়ন (বিজিবি)। ফেনীস্থ ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহিম জানান, ‘কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে সীমান্তে গরু চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবির সদস্যরা, বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও’।
ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, অবৈধপথে ভারতীয় পশু আসা বন্ধ করার জন্য বিজিবি ও পুলিশকে টহল বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গরু বাজারে আগত ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক।
প্রতিবারের মতো এবারও ফেনী জেলার পাঁচটি পৌরসভা ও ছয়টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি পশুর হাট বসবে।