দেশে করোনার সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যু। সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। আজ তা শেষ হচ্ছে। এই বিধিনিষেধ ৮ দিনের জন্য তুলে দেয়া হচ্ছে। ঈদুল আজহার জন্য বিধিনিষেধ তুলে দেয়ায় সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকার লকডাউন শিথিল করেছে, কারিগরি কমিটি নতুন কোনো পরামর্শ দিবে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের লকডাউনের শিথিলতার কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারের আরও কড়াকড়ি আরোপ করার দরকার ছিল, সেখানে শিথিলতা দেয়া হলো।
তিনি গত ঈদুল ফিতরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই ঈদে মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে বাড়ি গিয়েছে তার ফল আমরা দেখলাম। সংক্রমণ গ্রাম থেকে শহরে বা শহর থেকে গ্রামে ছড়াবে- এটা সহজেই বলা যাচ্ছে। কারিগরি কমিটি নতুন করে কোনো পরামর্শ দিবে কিনা- এই বিষয়ে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলতে পারবেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সরকার নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, লকডাউন শিথিলতার কোনো পরামর্শ তাদের ছিল না। সরকার নিজ থেকেই এই শিথিলতার ঘোষণা দিয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এতে আরও সংক্রমণ বাড়বে। খুব উদ্বিগ্ন আছি। ভয়ও পাচ্ছি। তিনি আরও জানান, আমরা শুরু থেকে মানুষকে মাস্ক পরাতে ব্যর্থ হয়েছি। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে মানুষকে মাস্ক পরাতে। এখন আমাদের মাস্ক পরা আন্দোলনে নামতে হবে। এক্ষেত্রে যুবকদের সংগঠন. মহিলা সংগঠন এবং আলেমদের আন্দোলনে শরিক করতে হবে। যারা এতদিন পিছনে ছিল। এই জনস্বাস্থ্যবিদ মানুষকে বিনামূল্যে ২০ কোটি মাস্ক সরবরাহ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দেরও দাবি জানান।
বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, না। এটি তাদের পরামর্শের উল্টো। তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, এর ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। আমরা উদ্বিগ্ন। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকার এ বছর ৫ই এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। দেশব্যাপী বিধিনিষেধের পাশাপাশি এবার স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছিল। কিন্তু তারপরও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১লা জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৪ই জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।