রাজশাহী: তাদের প্রধান টার্গেট ছিল বিদেশগামীরা। কারণ তাদের মাত্র ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় থাকে কাগজপত্র জমা দেওয়ার। এ কারণে প্রতারক চক্রটি করোনার নমুনা দেওয়া বিদেশগামীদের চিহ্নিত ফোন দিত। বলতো ‘আপনার করোনার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। কিছু টাকা দিলে নেগেটিভ করে দেওয়া যাবে…।’ পরে তারা সিভিল সার্জনের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে নেগেটিভ সনদ বানিয়ে দিত। প্রতিটি সনদের জন্য চক্রটি তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিত। অবশেষে এই জালিয়াত
চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। বুধবার রাতে নগরীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজশাহী নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদপত্র বিক্রি চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন নগর ডিবির উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাজশাহীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহায়ক তারেক আহসান (৪১), তার সহযোগী রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক রফিকুল ইসলাম (৪২) ও তার স্ত্রী সামসুন্নাহার শিখা (৩৮)।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি জানতে পারে একটি চক্র বিদেশগামীদের কাছে চড়া দামে করোনা সনদ বিক্রি করছে। প্রতিটি জাল সনদের জন্য চক্রটি তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। করোনা পরীক্ষার সনদে তারা প্রত্যাশীর নাম-ঠিকানা লিখে নেগেটিভ হওয়ার সনদ বানিয়ে দিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা কাগজপত্রে দেখা গেছে, তারা রাজশাহী সিভিল সার্জনের স্বাক্ষর পর্যন্ত জাল করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান, এই জাল করোনা সনদ তৈরি চক্রটির মূলহোতা ছিলেন তারেক আহসান ও তার সহযোগী রফিকুল ইসলাম। এই দুজন করোনা নমুনা পরীক্ষা করা মানুষগুলোর তালিকা সংগ্রহ করতেন। এর পরে টাকার দেন-দরবার করতেন রাকিবের স্ত্রী সামসুন্নাহার শিখা। তিনি করোনার নমুনা দেওয়া মানুষগুলোকে ফোন করে বলতেন- আপনার করোনার রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। টাকা দিলে নেগেটিভ করে দেওয়া হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে টাকার বিষয়টি চূড়ান্ত করতেন তিনি। পরে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিতেন। যেসব বিদেশগামী করোনার নমুনা দিতেন, তাদের মাত্র ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় থাকে কাগজপত্র জমা দেওয়ার। তাই তারা বেশি চাপে থাকতেন। আর মোক্ষম এই সুযোগটি কাজে লাগাতো এই চক্রটি। চক্রটি গত চার মাস থেকে করোনা সনদের এই অভিনব প্রতারণা চালিয়ে বিদেশগামীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ডিবির উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল আরও জানান, চক্রটির কাছ থেকে ১০০টি করোনা নমুনার জাল সনদ জব্দ করা হয়েছে। এই কর্মকা-ে জড়িত থাকা আরও ৩-৪ জন বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।