সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালীন গত ৫ দিনে খাদ্য সহায়তা চেয়ে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এ কল এসেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৪টি। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ১৩ হাজার ১৫১ জনের নম্বর মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। মাঠ প্রশাসন ১৭৩৬টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। এস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে গত ১লা জুলাই থেকে জনসাধারণের সার্বিক চলাচল ও কার্যাবলীর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এর আগে গত ১৪ই এপ্রিল থেকে অফিস, আদালত ও মানুষের চলাচল সীমিত করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ওই সময় থেকে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এ জরুরি খাদ্য সহায়তা সেবাটি যুক্ত করা হয়। এই নম্বরে কল করে সেবাগ্রহীতারা তাদের তথ্য দেন।
সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে মাঠপ্রশাসন স্থানীয়ভাবে পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ে নিশ্চিত হয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়। একেকটি পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল, আলুসহ ৫০০ টাকার খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এটুআই প্রোগ্রাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৫শে এপ্রিল থেকে গত সোমবার পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে মোট ফোনকল এসেছে ১৯ লাখ ৯ হাজার ২১৪টি। এরমধ্যে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৬০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। মাঠ প্রশাসন সরাসরি সেবাপ্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে মোট ৬০ হাজার ৩৬৭টি পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে সুবিধাভোগী পরিবারের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৯৩টি এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩ হাজার ২৭৪টি। গত ১লা জুলাই থেকে ৫ই জুলাই পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে আর কাউকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি। এসময় জেলা পর্যায়ে ১ হাজার ৭৩৬টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফের (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) আওতায় এক কোটিরও বেশি অতিদরিদ্র ও অসহায় দুস্থ পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি হারে চাল দেবে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশে ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩টি এবং ৩২৮টি পৌরসভার জন্য ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৮টিসহ মোট এক কোটি ১৭ হাজার ৫৫১টি কার্ডের বিপরীতে ১০ কেজি হারে এক লাখ ১৭৬ দশমিক ৫১ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকগণ ভিজিএফ বরাদ্দের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিদের অবহিত করবেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১২টি শর্ত দিয়ে অন্তত এর চারটি পূরণ করে এমন ব্যক্তি বা পরিবারকে দুস্থ বলে গণ্য করে সহায়তা দিতে হবে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- যাদের ভিটাবাড়ি ছাড়া কোনো জমি নেই, যে পরিবার দিন মজুরের আয়ের উপর নির্ভরশীল, যে পরিবারে মহিলা শ্রমিকের আয় বা ভিক্ষাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল, যে পরিবারে উপার্জনক্ষম পূর্ণ বয়স্ক কোনো পুরুষ সদস্য নেই, যে পরিবারে স্কুলগামী শিশুকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়, যে পরিবারে উপার্জনশীল কোনো সম্পদ নেই, যে পরিবারের প্রধান স্বামী পরিত্যক্তা, যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল ও অক্ষম প্রতিবন্ধী, যে পরিবার কোনো ক্ষুদ্র ঋণ পায়নি, যে পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চরম খাদ্য বা অর্থ সংকটে পড়েছে এবং যে পরিবারের সদস্যরা বছরের অধিকাংশ সময় দু’বেলা খাবার পায় না। অপরদিকে কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা দিতে দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ৫ হাজার ৪৫০ টন চাল এবং তিন কোটি এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। একই ধরনের সহায়তা দিতে দেশের ৬৪টি জেলার ৩২৮টি পৌরসভার অনুকূলে মোট ৩ হাজার ২৮০ টন চাল এবং মোট তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের শর্তানুযায়ী বরাদ্দকৃত চাল এবং নগদ টাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকসহ কর্মহীন ও দুস্থ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করতে হবে। আরেকটি আদেশে কোভিড-১৯, বন্যা, নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ৬৪টি জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে মোট ১৪ হাজার ১০০ টন চাল এবং এক কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।