প্রতিনিধি, শ্রীপুর, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরের সোনালী ব্যাংক হেড কোয়ার্টার শাখার মাধ্যমে হিসাবরক্ষণ অফিসের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাখাটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রেজাউল হক বাদি হয়ে গত ১ জুন শ্রীপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
শুক্রবার (২ জুলাই) কুড়িগ্রাম জেলার বুরুঙ্গিমারি উপজেলার আগরিয়া গ্রাম থেকে দুপুর দেড়টার দিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর অভিযুক্ত নিখিল বর্মনকে গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নিখিল বর্মন, রনজিত কুমার, সুভাষ চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায় ও ফুলমনী রানী।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমান (৫০), মাস্টার রোল কর্মচারী তানভীর (৩২), অডিটর মো. আরিফুল ইসলাম (৩৮) ও শাহেনা আক্তার (৫০)।
মামলার বর্ণনায় বলা হয়, ( অভিযুক্তরা) নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ব্যাংকে এডভাইস ও বিল দাখিল করেন। গত ১৭ জুন তারিখে দুপুর ১২টার দিকে মো. বজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এডভাইস ও পাঁচটি বিলের মোট ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকার হার্ড কপি ও সফট কপি সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখায় পাঠানো হয়। তানভীর এসব কাগজপত্র ব্যাংকে নিয়ে আসেন। টাকাগুলো পরিশোধ করার জন্য কাগজপত্র তিনি ব্যাংকে দাখিল করেন। বিলের সুবিধাভোগীদের হিসেবে টাকা পরিশোধ করার এডভাইস আসার পরেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে পরিশোধ করা হয়। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এসব টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের টেলিফোনে নিশ্চিত করেছিলেন।
পরবর্তীতে গত ১৮ জুন তারিখে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের একাউন্ট সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে এসব একাউন্ট সোনালী ব্যাংকের কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী শাখায় করা। এবং এসব অ্যাকাউন্টধারীর পেশা হিসেবে সেখানে কৃষক ও গৃহিণী লেখা আছে। অথচ বিলগুলো সরকারি অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের একাউন্টে যাওয়ার কথা। সন্দেহ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলে ২৯ জুন তারিখে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টপ পেমেন্ট করার জন্য চিঠি পাঠায় সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখা কর্তৃপক্ষ। এরপর শ্রীপুর উপজেলার জুনিয়র অডিট কর্মকর্তা মো.খলিল উদ্দিনের সাথে দেখা করে জানতে চাইলে তিনি এসব বিল অনৈতিক বলে সন্দেহ করেন। এরপর সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক ও ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা সরেজমিন হিসাবগুলো যাচাই করার জন্য শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে বজলুর রহমান একাউন্টগুলোর বিল স্থগিত করার জন্য আবেদন করেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা দাবি করেন, হিসাবরক্ষণ অফিসের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তা সরলতার সুযোগ নিয়ে তার কম্পিউটারে লগইন করে এসব বিল ও এডভাইস সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর হেডকোয়ার্টার শাখায় পাঠিয়েছে। এসব বিল ও এডভাইসে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান ও অডিট কর্মকর্তা মো.আরিফুল ইসলামের স্বাক্ষর আছে। অভিযুক্তরা সবাই প্রতারক ও ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের সদস্য বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এসব বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি আইনি কার্যক্রম চলমান আছে।