মৃত্যুর ১৯ বছর পরে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা চৌধুরী মোহাম্মাদ ইমন ওরফে সালমান শাহ হত্যা মামলা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী সালমান শাহ’র মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নিলা চৌধুরীর নারাজি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন আদালত। আগামী ১২ই এপ্রিল র্যাবকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আইনজীবী জানান। মঙ্গলবারই বাদী পক্ষে এডভোকেট মাহফুজ মিয়া নারাজি দাখিল করে তার ওপর শুনানি করেন। গত ২১ শে ডিসেম্বর নিলুফার চৌধুরী আদালতে হাজির হয়ে নারাজি দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা মামলাটিতে আদালত সালমান শাহ’র বাবা কমর উদ্দিন ও মা নিলুফার চৌধুরীসহ ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এরপর গত ৮ই ডিসেম্বর অভিযোগ প্রমানিত হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালত। উল্লে¬খ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সালমান শাহ’র ১১/বি নিউইস্কাটন রোর্ডের ইস্কাটন প¬াজার বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে প্রথমে হলি ফ্যামেলি পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে সালমান শাহ’র বাবা একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। উক্ত মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ পরে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির তদন্ত করেন। তদন্তকালে সালমান শাহ’র লাশ প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে, সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লে¬খ করা হয়। পরে সালমান শাহ’র পরিবার ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি দিলে সালমানের লাশ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্ত করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই প্রতিবেদনে, লাশ অত্যাধিক পঁচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্নয় করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লে¬খ করা হয়।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির আত্মহত্যা জনিতকারণে সালমান শাহ’র মৃত্যু হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী পরিকল্পিত হত্যাকা- উল্লে¬খ করে নারাজী দেন। নারাজিতে তিনি সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, জনৈক আবুল হোসেন খান, বাসার কাজের মেয়ে ডলি, মনেয়ারা বেগম, নিরাপত্তা কর্মী আব্দুল খালেক, সামিরার আত্মীয় রুবি, এফডিসির সহকারী নিত্য পরিচালক নজরুল শেখ ও ইয়াসমিন হত্যাকা-ে জড়িত মর্মে উল্লে¬খ করেন।
নারাজীর পর আদালত ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মজিবুর রহমানের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। এ তদন্ত কর্মকর্তাও অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালের ১৯শে জুলাই সালমানের বাবার ডিওএইচএস (জোয়ার সাহারা) এর বাসায় রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামের যুবকের আগমন ঘটে। মিথ্যা পরিচয়ে ওই যুবকের বাসায় প্রবেশের অভিযোগে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় রেজভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে সালমান শাহ হত্যার কথা স্বীকার করে তার সহযোগী হিসেবে ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মাদ, সাত্তার, সাজু, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা লতিফা হক লুসি ও জনৈক রুবির নাম প্রকাশ করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২২শে জুলাই আদালতের তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।
অতঃপর বাদী সালমানের বাবা কমর উদ্দিন অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তরের আবেদন করেন। আদালত ১৯৯৭ সালের ২৭ শে জুলাই অপমৃত্যুর মামলা এবং ক্যন্টনমেন্ট থানার মামলা একত্রে তদন্তের জন্য সিআইডির ওপর তদন্তভার হস্তান্তর করেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান প্রায় সাড়ে ৩ মাস তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ২রা নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লে¬খ করেন, বাদিপক্ষ মামলাটি পরিকল্পিত হত্যাকা- উল্লে¬খ করলেও এবং জনৈক রেজভী হত্যাকা-ে নিজে জড়িত এবং অন্যান্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে নাম প্রকাশ করলেও পরে জেলখানায় রেজভীকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, এ হত্যার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। এতে প্রমানিত হয় যে তার স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছা প্রদত্ত ছিল না। মূলত সালমান শাহ’র সঙ্গে নায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্টতার কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্ত কলহের সূচনা হয়। দাম্পত্ত কলহের কারণেই সে আত্মহত্যা করে। যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সমর্থন করে। তাই সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যাই।
আদালতে ঐ প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর ঐ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ফের নারাজী দাখিল করা হয়। যার ভিত্তিতে আদালত ১৯৯৯ সালের ৭ই মার্চ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
