চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আদৌ হবে কি না তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। ইতোমধ্যে বছরের অর্ধেক সময় চলে গেছে। এই অবস্থায় পরীক্ষা যদি না-ই নেয়া যায়, তাহলে একাধিক বিকল্প নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। এসব বিকল্পের মধ্যে রয়েছে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন, পূর্ববর্তী পরীক্ষার অ্যাকাডেমিক ফলাফলের গড় হিসাব অথবা সব বিষয়ে মিলে মাত্র ৫০০ নম্বরের একটি মেধা যাচাই পরীক্ষা।
এদিকে সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। তারা এখনো জানেনই না যে, তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষা দু’টি আদৌ হবে কি না। এ অবস্থায় দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ায় চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও এই অবস্থায় বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে শিক্ষা বোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার বিষয়েও আলোচনা চলছে। এই কমিটি পরীক্ষার বেশ কিছু বিকল্প নিয়ে আলোচনা করে তাদের সুপারিশ দেবে।
শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরের প্রথম দিকে সরকারের পরিকল্পনায় ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত করোনা পরিস্থিতিতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সেটি বাস্তবায়ন এখন প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় পরীক্ষার বিকল্প নিয়ে বাধ্য হয়েই ভাবতে হচ্ছে সবাইকে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমাদের পরীক্ষা নেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতিই নেয়া আছে। আমরাও চাইছি শেষ পর্যন্তও যদি পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটে তাহলে পরীক্ষা নেয়া হবে। আমরা এখনো শিক্ষার্থীদের অটোপাস বা অটোপ্রমোশনের বিষয়ে ভাবছি না। তবে শেষ পর্যন্ত যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না-ই হয় তাহলে তখনতো আমাদের বিকল্প ভাবতেই হবে। করোনা পরিস্থিতিতে যদি এই পরীক্ষা দু’টি নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে বিকল্প হিসেবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো বিকল্প নিয়েই চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের সাথে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার ফল ও অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে রেজাল্ট দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
অন্য একটি বিকল্প হচ্ছে পরিস্থিতির উন্নতি হলে যদি বছরের শেষদিকে হলেও সময় কাভার করা যায় তাহলে ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি ২০০ নম্বর এক করে ১০০ নম্বর, গণিত, বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ২০০ নম্বরের বিষয়গুলো একত্রিত করে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাও রয়েছে। আরো একটি বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসির ২৫ শতাংশ, এসএসসির ৫০ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্টে ২৫ শতাংশ নম্বর হিসাব করে মূল্যায়ন করা হতে পারে। আর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জেএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএর ৫০ শতাংশ আর বাকি ৫০ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্ট ও অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেয়া হতে পারে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ড. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক জানান, আমরা এখনো পরীক্ষা নেয়ার পক্ষেই রয়েছি। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কিংবা আরো অবনতি হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই বিকল্প খুঁজতে হবে। পরীক্ষার বিকল্প খুঁজতে কোনো কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো আমি কিছু জানি না। তবে অনেকগুলো বিকল্প নিয়েই আমরা চিন্তাভাবনা করছি। কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত নয়। আর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের যেসব অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি শিক্ষকদের সেগুলো সংরক্ষণ করতে বলেছি। যাতে পরীক্ষা না হলেও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা সহজ হয়।