ঢাকা: ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ। গানটি লিখেছেন, বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের প্রাত্তণ স্বামী রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও কন্ঠ দিয়েছেন কবির সুমন ও সাবিনা ইয়াসমিন। গানটি বেশ জনপ্রিয় ছিল এবং এখনি আছে। গানটির লেখক রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ নিজের ব্যর্থতা ও বেদনা থেকে গানটি জন্ম দিয়েছেন। কারন বিশাল আকাশের কোন ঠিকানা নাই ।
আকাশ আর পৃথিবীর দূরত্ব অসীম। মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করে, আকাশে বসবাস করে না। তাই মানবপ্রেম পৃথিবীতে হয়, আকাশে নয়। প্রেমিক প্রেমিকা দুইজনের মধ্যে কেউ আকাশে বসবাস করার সুযোগ নেই। সুতরাং পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে মানবপ্রেম অর্থহীন ও কল্পনার বস্তু যার কোন বাস্তবতা নেই। শুধুমাত্র কল্পনা থেকে সৃষ্ট সংগীত ও সাহিত্য রচনায় এই গানটি ভূমিকা রাখতে পারে। জনপ্রিয় এই গান আমাদের বর্তমান বাস্তবতার সাথে মিলে গেছে। বিশ্ব মহামারী করোনা আমাদেরকে গিলে ধরেছে। প্রায় দেড়বছর ধরেই বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ করোনায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবিত্ত। দেড়বছর ধরে কর্মহীন মানুষ জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে আপ্রাণ সংগ্রাম করে । গত বছর করোনা শুরুর পর ঘোষিত লকডাউনে মানুষের হাতে থাকা পুঁজি বসে বসে খেয়েছে। কিন্তু এক বছর তিন মাস পর আবার লকডাউন হওয়ায় মানুষের হাতে আর কোন পুঁজি নেই। ফলে গত বছরের লকডাউনের মত এবার আর মানুষ ঘরে বসে খেতে পারছে না। একই সাথে করোনায় গরিব হওয়া নতুন আড়াই কোটি মানুষের সাথে আরো নতুন গরিব যোগ হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় চলমান লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে প্রায় অর্ধেক জন সংখ্যা গরিব জন গোষ্ঠির আওতায় পরে যাবে। নতুন গরিবের বড় সংখ্যার মধ্যে অতি গরিবের সংখ্যা মোট সংখ্যার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে নতুন গরিবদের কোন অস্তিত্ব নাই। বিভিন্ন সমিক্ষা বলছে, চলমান লকডাউনে সরকারকে নূন্যতম তিন কোটি মানুষকে খাবার দিতে হবে। কিন্তু লকডাউনের তৃতীয় দিন যাচ্ছে, সরকারি অনুদান দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমাদের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও ক্ষুধার্থ মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। করোনা মৃত্যু প্রতিরোধ করতে গিয়ে ক্ষুধার্থ মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মানুষকে বাঁচানোর জন্য চলমান লকডাউন সুস্থ্য মানুষের মৃত্যুর কারন যেন না হয় সেই আশা প্রত্যেকের। পরিশেষে বলা যায় পেটে খাবার না দিয়ে ঘরে থাকতে বলা আর আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখা এর মধ্যে কোন দৃশ্যমান প্রার্থক্য নেই। মানুষকে সুস্থ্য রাখতে ঘরে থাকার কথা বললে পেটে ভাত দিতে হবে। না হয় ক্ষুধার্থ মানুষ কখনো পলাতক চোরের মত, কখনোবা হিং¯্র বাঘের মত বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বর্তমানে প্রেম বলতে যেমন লাইলি মজনুর প্রেম নেই, ঠিক তেমনই ক্ষুধার্থ মানুষেরও প্রেম ভালোবাসা থাকে না। কথায় বলে, টাকা না থাকলে প্রেম ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। সুতরাং ক্ষুধার্থ মানুষকে না খেয়ে ঘরে বসে থাকতে বলা আর আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখা একই কথা। তাই যেকোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আগে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি।