গাজীপুরঃ গাজীপুর মহানগরে জলাবদ্ধতা পুরাতন বিষয়, নতুন বিষয় নয়। গাজীপুর ও টঙ্গী এ দুটি পৌরসভার সময়কালে অপরিকল্পিত নগরায়ন, যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও খাল-বিল জলাশয় জবর দখল শুরু হয়। এ দুটি পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ গুলো পরিকল্পিতভাবে নগর উন্নয়ন যথাযথভাবে করতে না পারার কারনে বর্তমানের কৃত্তিম জলাবদ্ধতার জন্ম। বিশেষ করে গাজীপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, টঙ্গী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও মেয়র বর্তমান গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ এর সভাপতি, এ্যাড. আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুল করিম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ও বর্তমান মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমরা কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।
অপরিকল্পিত নগরায়ন হু হু করে বাড়ার কারনে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে গেছে। এখনও পুকুর জলাশয় নালা ডুবা ভরাটের উৎসব চলমান। একই সাথে নদী ও বিল দখলের মচ্ছব চলছেই। এক সময়ের নদী বন্দরখ্যাত চিলাই নদী বিল থেকে খালে খাল থেকে এখন নর্দমায় পরিণত হতে চলছে। পারুলি নদীর প্রায় একই অবস্থা ।
গাজীপুর শহরের হানকাটা ব্রিজ আছে বলেই চিলাই নদীর অস্তিত্ব দাঁড়িয়ে আছে। হানকাটা ব্রিজ থেকে তিতাস গ্যাস সংলগ্ন রেল গেইট পর্যন্ত ঐতিহাসিক চিলাই নদীর আলো নিভু নিভু জ্বলে। এই রেল ব্রিজ থেকে সালনা হয়ে তুরাগে মিশে যাওয়া চিলাই নদী এখন শুধুই ইতিহাস বাস্তবে নেই।
এদিকে মূল চিলাই নদীর কানাইয়া-বলধা পয়েন্ট থেকে সদর হাসপাতাল হয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত চিলাই নদীর অস্তিত্ব কফিন হয়ে গেছে। গাজীপুর শহরের এক সময়ে জমজমাট নদী বন্দর রথখোলা এখন শুধুই ইতিহাস। ভাওয়াল গড়ের রাজাবাড়ি অংশে বন থেকে উৎপত্তি হওয়া চিলাই নদীর সকল শাখা নদী এখন নিরাকার হয়ে ইতিহাসে ডুবে গেছে।
গাজীপুর মহানগরের চারপাশে যেসকল নদ-নদী আছে, সেগুলোর তীর ভরাট হয়ে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। নদীর পার গুলোতে জবর দখল হয়ে অবৈধভাবে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেছে। কলকারখানার বর্জে নদী খাল বিলের পানি সুপেয় থেকে বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় গাজীপুর মহানগরে পানি শুণ্যতা তৈরি হচ্ছে। একই সাথে জলাধার খাল বিল নদীর বিষাক্ত পানির দূর্গন্ধ নগরবাসীকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করছে। তুরাগ নদী ও মোগরখালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, টঙ্গী ও ঢাকার আশুলিয়া সাভার এলাকাগুলোর শিল্পনগরী থেকে আসা বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য পদার্থ গাজীপুর মহানগরকে দূর্বিষহ করে তুলছে।
সম্প্রতি নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরাতন রাস্তা সংস্কার কাজে দেখা যায়, বসত বাড়ি ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি কবরস্থানও ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শহীদ তাজউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একাধিক বহুতল ভবন চিলাই নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের আমলে সুবিধাভোগিরা গাজীপুর মহানগরের পানির উৎস জবর দখল করে ছোট করে ফেলছে। পানির উৎসখেকোরা ভাওয়াল রাজার ঐতিহ্য বিভিন্ন রাজপুকুরও জবর দখল করার চেষ্টা করছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজীপুর মহানগর বর্তমানে জলাবদ্ধতায় যেভাবে আটকে গেছে, জরুরী ভিত্তিতে বিকল্প উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করলে গাজীপুর মহানগরের রাস্তাঘাট বাসাবাড়ি যে কোন বন্যায় অনেকাংশে তলিয়ে যেতে পারে। (চলবে…)