সিলেট: আইসিইউতে জায়গা নেই সিলেটে। একটি আইসিইউ বেডের জন্য চলছে তীব্র লড়াই। রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা। নানা তদবির, টাকা খরচ করেও পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের আইসিইউ রোগীতে ভর্তি। আইসিইউ সংকটের কারণে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। গতকাল একদিনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
এর বাইরে উপসর্গ নিয়ে কয়েকজন মারা গেছেন। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ১৫ দিন আগেও সিলেটে দুশ্চিন্তা ছিল না। কারণ সিলেটের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো দিয়ে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঢোকার কোনো খবর মেলেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করার কারণে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ছিল স্বস্তি। কিন্তু এবার গোটা দেশই গ্রাস করেছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। সিলেটও এর বাইরে নয়। ধীরে ধীরে সিলেটকেও আক্রান্ত করেছে নতুন ধরনের ওই করোনাভাইরাস। ফলে প্রতিদিনই আক্রান্ত শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে। সিলেটের চারটি ল্যাবে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭শ’ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষায়ই শনাক্ত মিলছে দুই থেকে আড়াইশ’ জনে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেটে এখন করোনা শনাক্তের হার ৩০ ভাগের কাছাকাছি। ফলে করোনার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ হটস্পটে পরিণত হয়েছে সিলেট জেলা। তারা জানান, সিলেটে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউ সংকটের কারণে রোগী মৃত্যুর হার বেড়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৯ জন। ফলে সিলেটে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটে গেছে। সংক্রমণ বাড়ার কারণে আইসিইউতে ঠাঁই হচ্ছে না। সিলেটের সরকারি বেসরকারি মিলে করোনা রোগীদের জন্য ৬৭টি আইসিইউ রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে প্রায় ৪৫টি বেড। এর বাইরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রয়েছে ১৬টি বেড ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৬টি বেড। দু’দিন ধরে সরকারি, বেসরকারি কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে বেড খালি মিলছে না। আইসিইউ বেড না পেয়ে কিংবা দেরিতে পেয়ে মারা যাওয়া কয়েকজন স্বজন জানিয়েছেন, সিলেটের আইসিইউ বেডের জন্য তারা রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন। কিন্তু আইসিইউ বেড মিলছে না। একটি আইসিইউ বেডের জন্য তাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত আইসিইউ বেডের জন্য ছিল তীব্র লড়াই।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান- সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আর জায়গা খালি নেই। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে তারা নির্ধারিত সংখ্যার অধিক রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। আর রোগী ভর্তির জায়গা নেই। এ কারণে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি থাকা যেসব রোগীর করোনা শনাক্ত হচ্ছে তাদেরকে ওসমানীতে রেখেই চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে আরও ২০০ শয্যার একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মোজয় দত্ত গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আইসিইউ সংকট চলছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সব আইসিইউ রোগীতে ভর্তি। চিকিৎসা পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে শাহপরাণ গেটের খাদিমনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। কিন্তু খাদিমনগর কিংবা দক্ষিণ সুরমা হাসপাতালে আইসিইউ সাপোর্ট নেই। এ কারণে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের সেখানে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদেরকে শামসুদ্দিনে কিংবা ওসমানীতে রাখতে হচ্ছে।