ঢাকা: করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে আগামী বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২১ শর্তের বিধিনিষেধ দিয়ে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বিধিনিষেধ চলাকালীন ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’- এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ কেউ অমান্য করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমানসহ সড়ক, রেল, নৌপথে গণপরিবহন ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল ও মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান-ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালস সহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দরসমূহ এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/ টেকওয়ে) করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন। এদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে বিধিনিষেধ কার্যকর করার জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় আগামী ১লা জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ই জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার: ডিএমপি কমিশনার শফিকুল
বিধিনিষেধ চলাকালীন সময়ে বিনা প্রয়োজনে বাসার বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, এবারের বিধিনিষেধ আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোরভাবে পালন করা হবে। লকডাউন ভঙ্গ করে বাসার বাইরে বের হলেই আইনি জটিলতা পোহাতে হবে। এবার আমরা প্রথমবারের মতো ২৬৯ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সঙ্গত কারণ দেখাতে না পারলে প্রাথমিকভাবে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করবো। এক্ষেত্রে আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা শেষে কমপক্ষে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, কাঁচাবাজার, হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্ট জরুরি প্রয়োজনে রিকশা ব্যবহার করা গেলেও কোনো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। যদি কেউ ব্যবহার করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এক্ষেত্রে জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের বাইরে অন্য কেউ তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে না। তিনি বলেন, এবার যেহেতু কোনো মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা থাকছে না, তাই সরকার জরুরি সেবা বলতে যা বুঝিয়েছে এর বাইরে আমরা কোনো যানবাহন চলতে দেবো না। তবে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জরুরি সেবার দরকার হলে সেগুলো নিতে পারবেন।