গাজীপুর: মহান জাতীয় সংসদে আমলাদের বিরুদ্ধে সরকার ও বিরোধী দলের এমপিরা যখন সোচ্চার, সিনিয়র এমপিদের বক্তব্যে আমলাদের বিরুদ্ধে যখন জ্বালময়ী ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটছে, সেই প্রেক্ষাপটে গাজীপুরে এক ছোট আমলার অশালীন আচরণে ঘটনস্থলেই মারা গেছেন এক জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিষয়টি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
আজ বুধবার (৩০ জুন) সকাল ১০টায় সরেজমিন গাজীপুর মহানগরের ৩৩ নং ওয়ার্ডের উত্তর খাইলকুর, বটতলা এলাকায় গিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
অনুসন্ধানে প্রকাশ, উত্তর খাইলকুর এলাকার জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন সাব কন্ট্রাকে কাজ করার জন্য একটি ক্ষুদ্র সুয়েটার তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীর পাশেই সাজিম সুয়েটার্স নামের উক্ত কারখানায় ১৩৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। রোববার বিকেলে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ভূমি( টঙ্গী সার্কেল) সাব্বির আহমেদ কয়েকজন আনসার সদস্য নিয়ে ওই কারখানায় যায়। শ্রমিকদের মুখে মাস্ক না থাকার অভিযোগে কারখানাটি তালা মেরে চাবি নিয়ে যায় ওই কর্মকর্তা। পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় সাব্বির আহমেদ পুনরায় কারখানায় যায়। কারখানার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মতিউর রহমান তখন কারখানায় উপস্থিত ছিলেন।
মোঃ মতিউর রহমান জানান, আমার ১৩৫ জন শ্রমিকের মুখে মাস্ক ছিল। রোববার চাবি নেয়ার পর দুটি ফোন নাম্বার থেকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে চাবি আনতে বলা হয় । টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাব্বির আহমেদ সোমবার সন্ধ্যায় কারখানায় প্রবেশ করে অন্য কারখানার একজন কোয়ালিটি কন্ট্রোলার ( কিউ সি) বিল্লাল হোসেনকে মাস্ক না থাকার অভিযোগে আমার কারখানায় মারধোর করেন। সাব্বির আহমেদ এর নেতৃত্বে কয়েকজন আনসার সদস্য ওই কর্মকর্তাকে মারপিট করার সময় আমার বাবা জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন (৭৬) ঘটনার প্রতিবাদ করেন। জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার পরেও সাব্বির আহমেদ আমার বাবাকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় আমার বাবা চরমভাবে লজ্জ্বিত হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। দ্রুত তাকে নিকটবর্তী তায়রুননেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডাক্তারদের বরাত দিয়ে মতিউর রহমান জানান, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আমার বাবার ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। অত:পর লাশ উত্তর খায়লকুর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
কারখানার আশে পাশের দোকানিরা জানান,কফিল উদ্দিন সাহেব ভালো মানুষ ছিলেন। দেশ স্বাধীন করে স্বাধীন দেশের কর্মচারীর দ্বারা জন সমক্ষে লাঞ্চিত হওয়ার কারনে অপমান সইতে না পেরে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানায়, কফিল উদ্দিন সাহেবের দুই ছেলে ও এক মেয়ে । এ বিষয়ে তারা কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নন।
মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকার্ত পরিবারের আহাজারি । মরহুমের চাচাত ভাই স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ সরকার জানান, আমরা ঝামেলায় জড়াতে চাইনা। জেলা প্রশাসনের ম্যজিষ্ট্রেট আসবে বলে শুনেছি।
মরহুমের বাসার দোতলা থেকে নেমে ঘটনাস্থল কারখানার গেটের সামনে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের একটি গাড়ি নং (ঢাকা মেট্রো- ঘ-১১-০০৫২) দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
কারখানায় গিয়ে দেখা যায়,ওই গাড়িতে করে আাসা গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যজিষ্ট্রেট আবুল কালাম এর নেতৃত্বে একদল ম্যজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। এসময় কোন পুলিশ ছিল না।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যজিষ্ট্রেট আবুল কালামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) মো: ইসমাঈল হোসেন জানান, এই ধরনের কোন অভিযানের খবর আমি জানিনা। সরকারি বিধি মোতাবেক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ওসিকে জানানোর কথা। তবে আমার থানাধীন ঘটনস্থল হওয়ায় আমি ঘটনাটি নিবিরভাবে তদন্ত করেছি। মরহুমের পরিবার অভিযোগ দিলে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গাজীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত জেলা কমান্ডার আলহাজ্ব এস এম মুজিবর রহমান ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের কর্মচারীর দ্বারা লাঞ্চিত হয়ে জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু অনাকাঙ্খিত,অনভিপ্রেত ও দু:খজনক। বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আলাপ আলোচনা করে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।