রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, এই হারে রোগী বাড়তে থাকলে চিকিৎসা সেবা আবার ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, নগরীতে অস্থায়ী জায়গায় কোভিডের জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল যেগুলো বন্ধ হয়ে রয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলো আবার চালু করার প্রস্তুতি শুরু করা হবে।
এছাড়া কোভিডের জন্য নির্ধারিত না হলেও নগরীর যেকোনো হাসপাতালে কোভিড রোগী এলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালগুলোর অবস্থা কী?
দেশের প্রধান হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই সপ্তাহ আগেও কোভিড রোগীর জন্য নির্ধারিত বেশিরভাগ শয্যা খালি ছিল।
কিন্তু গত কয়েকদিনে অল্প সময়ের মধ্যে রোগী ভর্তির হার কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে এর কর্তৃপক্ষ বলছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেছেন, এখনকার হারে রোগী বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হবে।
‘আমাদের হাসপাতালে দুই সপ্তাহ আগে রোগী ভর্তির হার যা ছিল, এখন হার বেশি। এখন প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন আমাদের এখানে ভর্তি হচ্ছে।’
ঢামেকে ৭৮০টি বেড রয়েছে। সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৯৫ জন ভর্তি হয়েছিল।
জেনারেল নাজমুল হক বলেছেন, এখন ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রোগী ভর্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘যেটা আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী কয়েকদিনে আমাদের বাকি বেডগুলো খালি থাকবে না,’ বলেন তিনি।
ঢাকায় কুর্মিটেলা হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও কোভিড রোগীর চাপ দ্রুত বৃদ্ধির একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার কি উন্নয়ন হয়েছে?
গত এপ্রিল মাসেই যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়েছিল, যেটাকে দ্বিতীয় ঢেউ হিসাবে বলা হয়, সে সময়ও হাসপাতালগুলোতে শয্যার অভাব, অক্সিজেন সংকটসহ চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অভিযোগ উঠেছিল।
চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে, এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে।
তখন চিকিৎসায় নানা ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে- সেই প্রশ্ন রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেছেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এই মহামারী সামলাতে এডহক ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে সংকট থাকছে।
‘প্রতিবারই একই কথা বলা হয়। যখন রোগী বাড়ে, তখন আমরা কি করবো- তার নানা পরিকল্পনা করা হয়। আবার রোগীর সংখ্যা কমে গেলে সে পরিকল্পনাগুলোর কথা সবাই ভুলে যায়। বিশেষ করে কর্তৃপক্ষ তা ভুলে যায়,’ বলেন তিনি।
‘এখন রোগী যা আসছে, এই অবস্থাটা পর্যন্ত সামাল দেয়া যাচ্ছে। কিন্তু এরপর যদি এই হারে বাড়তে থাকে, তখন সামাল দেয়াটা মুশকিল হয়ে পড়বে, চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপতো পড়বেই ভেঙে পড়ার মতো উপক্রম হবে’ বলে মনে করেন লেলিন চৌধুরী।
আইসিইিউ শয্যা নেই
ঢাকার বড় কয়েকটি হাসপাতালে কথা বলে জানা গেছে, এখনই কোভিডের জন্য নির্ধারিত ঢাকার এই হাসপাতালগুলোতে আইসিইিউ শয্যা খালি নেই।
তবে চিকিৎসকদের অনেকে বলেছেন, গত এপ্রিলের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং তা কাজে লাগছে।
হাইফ্লো অক্সিজেন শয্যা বাড়ানো হয়েছে এবং সাধারণ শয্যার সাথেও অক্সিজেন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. নাসিমা সুলতানা বলেছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে হাসপাতালের যে অবকাঠামো রয়েছে, সেখানে অল্প সময়েই শয্যা সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব নয়।
এরপরও পরিস্থিতির বিবেচনায় সীমাবদ্ধতার মধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু রোগীর চাপ বেশি, সেজন্য তিনটা শয্যার জায়গায় চারটা বা পাঁচটা শয্যা দিচ্ছি বা দিতে বাধ্য হচ্ছি’।
‘অনেক ক্ষেত্রে রোগী বেশি বেড়ে গেলে তখন ফ্লোরে ম্যাট্রেস দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মানে রোগী যাতে কোনো ভাবেই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে,’ বলেন নাসিমা সুলতানা।
কিন্তু হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবের অভিযোগও রয়েছে।
সে ব্যাপারে ড. নাসিমা সুলতানা বলেন, যেখানে রোগী বেশি হচ্ছে, সেখানে ম্যানপাওয়ার রিডিস্ট্রিবিউশন করা হচ্ছে। চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য যে জিনিসগুলো লাগছে, প্রতিনিয়তই তা কেনা হচ্ছে।
ঢাকায় অস্থায়ী জায়গায় কয়েকটি হাসপাতাল করা হয়েছিল যেগুলো আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে প্রয়োজনে সেগুলোও চালু করার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কর্তৃপক্ষ মনে করছে, কঠোর লকডাউন দিয়ে এখন মানুষকে অন্তত সাতদিনের জন্য ঘরে রাখা সম্ভব হলে হাসপাতালগুলোতে চাপ কমবে।
সূত্র : বিবিসি