রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই করোন ভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। আগের দিন সকাল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় দেশে সংক্রমণ হার প্রায় ২৪ শতাংশ। তবে আলাদাভাবে ৮ জেলায় সংক্রমণ হার ৫০ শতাংশের বেশি। সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩১ হাজার ৯৮২টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৬ জন ও মারা গেছে ১১২ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন ও প্রাণহানি হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৮ জনের। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে সংক্রমণ যেন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য রাজধানী ঢাকাকে আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সংক্রমণ পরিস্থিতির চিত্র বলছে, এক সপ্তাহ আগে গত ২২ জুন ঢাকা শহরে সংক্রমণ হার ছিল ১২.৬২ শতাংশ। সেখান থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.১৭ শতাংশে। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ঢাকা শহরে সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। তবে ঢাকার চেয়েও খারাপ অবস্থা বাইরের জেলাগুলোতে। সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার ২৩.৯৭ শতাংশ হলেও ৮টি জেলায় এ হার ৫০ শতাংশের বেশি।
এ আট জেলা হলো- রাজবাড়ী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর ও হবিগঞ্জ। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী জেলায় ১০২টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৩ জন। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৫১.৯৭ শতাংশ। লালমনিরহাট জেলায় ৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৩ জন। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৬৮.৩০ শতাংশ। ঠাকুরগাঁও জেলায় ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১০৩ জন। শনাক্তের হার ৫৬.২৯ শতাংশ। দিনাজপুর জেলায় ২৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪৪ জন। শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ।
বাগেরহাট জেলায় ২২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১৬ জন। শনাক্তের হার ৫১.৫৬ শতাংশ। ঝিনাইদহ জেলায় ১৪৪টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯৩ জন। শনাক্তের হার ৬৪.৫৯ শতাংশ। পিরোজপুর জেলায় ১২০টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৩ জন। শনাক্তের হার ৫২.৫০ শতাংশ। হবিগঞ্জ জেলায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৭ জন। শনাক্তের হার ৫১.৬৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনার রোগী পাওয়া যায়। এর পর সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। ওই সময়ে দিনে ৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হতো। মৃত্যুও ছিল ৫০-৬০ জনের মধ্যে। দেশে করোনার দ্বিতীয় টেউ আঘাত হানে চলতি বছরের মার্চ থেকে। এ সময় একদিনে ৮ হাজার ৩৬৪ জন শনাক্ত ও ১১৯ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬৭ জন পুরুষ এবং ৪৫ জন নারী। এর মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৬১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। অঞ্চল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ২২ জন, চট্টগ্রামে ১৬, রাজশাহী ২১, খুলনায় ৩৫, বরিশাল ৩, সিলেট ১, রংপুরে ১০ ও ময়মনসিংহে ৪ জন মারা গেছেন। এ সময়ে দেশে সুস্থ হয়েছে ৪০২৭ জন।