ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ লকডাউন কার্যকর থাকবে। বিধিনিষেধ চলাকালীন পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ব্যতীত সকল যানবাহন বন্ধ থাকবে। সকল শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, বিনোদন কেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। তবে হোটেল-রেস্তরাঁগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (টেকওয়ে) করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেয়া করতে পারবে। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহলের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। লকডাউনের রূপরেখা বাস্তবায়ন নিয়ে গত শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভার আলোচনার সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদন পাওয়ার পর গতকাল তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস এবং ব্যাংকের জুন ক্লোজিং বিবেচনায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউন পালন করা হবে। লকডাউন চলাকালে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাসহ শিল্প-কারখানা চালু থাকবে। সীমিত আকারে ব্যাংকিংও চালু থাকবে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশায় চলাফেরা করতে পারবে। এরপর থেকে কঠোর লকডাউন কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবারের আগেই এ সংক্রান্ত আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কঠোর লকডাউনে মানুষ যেন প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এজন্য পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন হতে পারে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে ঈদুল আজহা পর্যন্ত এ লকডাউন চলতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় আগামী ১লা জুলাই থেকে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। ২৮শে জুন থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন শুরু হলে যানবাহন পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। ১লা জুলাই তা পুরোপুরি বন্ধ হবে। তিনি বলেন, আমি সবাইকে আহ্বান করবো- সামনে যে লকডাউন সেখানে পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে, সেনাবাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন, যাতে লকডাউনটা সুন্দরভাবে পালিত হয়, ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণটা রোধ হয় এবং মৃত্যুর সংখ্যা যাতে অনেক কমিয়ে আনতে পারি। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কেউ লকডাউন না মানলে করোনায় মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতর্কবাণী দিয়ে বলেন, আপনারা সবাই করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, মাস্ক পরবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। স্যানিটাইজ করবেন এবং লকডাউন আপনারা মেনে চলবেন। আর যদি আমরা না মানি আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে, আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে। হাসপাতালে চিকিৎসা দিতেও সমস্যা তৈরি হবে। জাহিদ মালেক বলেন, ইতিমধ্যে হাসপাতালের পাঁচ থেকে ছয় হাজার বেড রোগীতে ভর্তি হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের সেই দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, লকডাউনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে যেসব বিষয় উল্লেখ আছে সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে বাংলাদেশ পুলিশ। প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ১৪ই এপ্রিল থেকে জনসাধারণের সার্বিক চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি আছে। আগামী ১৫ই জুলাই পর্যন্ত এ বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরবর্তীতে ২১শে জুন থেকে ৭ দিনের জন্য ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৭ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় নতুন করে শাটডাউন বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ পরামর্শের আলোকেই নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।